বাজারমূল্য ধরে রাখতে ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

মার্কিন ডলারের রেট কমেছে। বাজারে ডলারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল রোববার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত নিলামে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দাম কমেছে জানিয়ে আজ সোমবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় বাজারমূল্য ধরে রাখতে ডলার কেনার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের ১৮টি ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার কেনা হয়েছে।
নিলামে বেশিরভাগ ব্যাংক ১২০ টাকার দর দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দামে কিনেছে। ডলারের দাম প্রসঙ্গে একাধিক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দরপতনে বাজারে প্যানিক তৈরি হয়েছে। এতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ব্যাংক বাজারে ডলারের স্থিতিশীলতা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিক মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে। এতে আন্তঃব্যাংক ও রেমিট্যান্স বাজারে ডলারের দাম কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম কমেছে দুই টাকা ৯০ পয়সা।
গত বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ ব্যাংক রেমিট্যান্সের মার্কিন ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১২০ টাকা রেট অফার করেছে। যদিও কিছু ব্যাংক দাবি করেছে, তারা ১২০ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত কিনেছে। তবে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে বেশি দর থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ১২০ টাকার বেশি রেট দিতে চায়নি। অথচ সপ্তাহের শুরুতে ব্যাংকগুলো ১২২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত রেট অফার করছিল।
ডলারের রেট কমা প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর আগের মতো ডলারের চাহিদা নেই। অনেক ব্যাংক এখন হাতে থাকা ডলার বিক্রি করে দিতে চাইছে। আমদানি এলসির চাপ কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি থেকে নিয়মিত আয় আসার কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দুই কার্যদিবসে ডলারের দর ১২৮ টাকায় উঠে গিয়েছিল। তখন বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ডলারের চাহিদা কমে যাওয়া, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে যাওয়াই ডলারের দরপতনের মূল কারণ জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে ডলারের জোগান বাড়লে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে এবং আমদানির খরচ হ্রাস পায়। আগে যেখানে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে হিমশিম খেত, এখন সেই সমস্যা আর নেই। রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা দিয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, গভর্নরের নির্দেশনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। ফলে তাদের আর ব্যাকলগ নেই। এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো থাকায় ডলারের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিক চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ১০৭ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৫৭ পয়সা হিসাবে)। জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১০৭ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার। আগের বছরের (২০২৪ সাল) জুলাই মাসের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই সময়ের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১২ কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মে মাসে ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।