নিয়ন্ত্রণে মসলার ঝাঁজ, গুনতে হচ্ছে না বাড়তি টাকা

প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে কারণ ছাড়াই মাংস রান্নার মসলাসহ নানা পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ে। এতে ভোক্তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। সেই বৃত্ত থেকে এবার বেরিয়ে এলো মসলার বাজার। বেশিরভাগ মসলার দাম এবার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। গুটি কয়েক মসলার দাম বাড়লেও কমার তালিকা বড় ছিল- এমনটি জানান বিক্রেতা ও ভোক্তারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, কাপ্তান বাজার, মৌলভীবাজার, হাতিরপুল বাজার, মিরপুর ২, শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
কাপ্তান বাজারে মসলা কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, মসলাজাত পণ্যের দাম খুব কমেছে, বিষয়টা এমন না। প্রতিবারে ঈদে যেভাবে মসলার দাম বাড়ে, এবার তেমন বাড়েনি। অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল মসলার দাম। গতবারের তুলনায় অনেক মসলা এবারে কমে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন পেঁয়াজ, রসুন ও জিরা। তবে এলাচ ও লবঙ্গের বাজার চড়া। একই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা তন্ময় সাদেক বলেন, কাল ঈদ। এবারে অন্যান্যবারের মতো মসলার দাম লাগামছাড়া হয়নি। দুই-তিনটি মসলার দাম বাড়লেও কমার তালিকা বড়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মসলাজাত পণ্যের দাম অন্যবারের তুলনায় কম। গুটি কয়েক মসলার দাম বেড়েছে। বাকি মসলার দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। মসলার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈধ পথে ভারত থেকে গরম মসলার আসা অনেক কমেছে। তবে অবৈধভাবে এসেছে। এতে গরম মসলার বাজারের দামের ঝাঁজ কমেছে।
অনেক ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) সহজে খুলতে পারায় ভারত বাদে অন্য দেশ থেকে এবার মসলা আনা হয়েছে। এতে ভারতীয় একক আধিপত্য কমেছে। ফলে বাজারে এক ধরনের প্রতিযোগিতা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটার কারণে মসলার দাম কমেছে। তাছাড়া বাজারে সিন্ডিকেট এবার সুবিধা করতে পারেনি। এতে কৃত্রিমভাবে বাজারে মসলার দাম বাড়েনি। ফলে বেশিরভাগ মসলা দাম ছিল কমতিতে।
কথা হয় ঢাকার মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ী নুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন বাজারে মসলার প্রতিযোগিতার পরিবেশ বেড়েছে। অতীতের অনেক সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। এর ইতিবাচক প্রভাবে মসলার দাম অন্যান্যবারের চাইতে কমতিতে। কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ মসলার অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে না ক্রেতাদের। গেল কোরবানি ঈদে যে জিরার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা ছিল। সেটা এখন ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তারা বলেন সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গ, এলাচ, ধনে গুঁড়া, আদা, তেজপাতা, মরিচ, হলুদসহ প্রায় সব মসলার দাম কমেছে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি দেশি আদা মানভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভারতীয় ও চীনা আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাপ্তান বাজারের মুদি দোকানি আলী আকবর বলেন, মসলার দাম অন্যবারের চেয়ে কম। তবে মসলা যেগুলো পরিমাণে কম লাগে, সেই মসলার দাম চড়া। তবে সেটা অন্যবারের তুলনায় কম।
তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় জিরা পাইকারি দামে কেজিতে ৮০ টাকা, সাধারণ জিরা ২০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৩০ টাকা, লবঙ্গ ২০ থেকে ৩০ টাকা, দারচিনি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম গতবছরের চেয়ে কমেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি দেশি রসুন মানভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ১৮০ টাকা, আমদানি করা আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনো মসলার মধ্যে হলুদ প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, আমদানি করা হলুদ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শুকনা মরিচ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আমদানি করা শুকনো মরিচ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি তেজপাতা ১৪০ থেকে ২০০ টাকা ও ধনে গুঁড়া ২০০ থেকে ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় জিরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মিষ্টি জিরা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি মেথি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ২৫০ টাকা, পাঁচফোড়ন ২২০ টাকা, সাদা তিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, কালোজিরা ৩১০ থেকে ৩৭০ টাকা, সাদা ও লাল সরিষা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বাদাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ভারতীয় এলাচ মানভেদে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, বড় দানা এলাচ মানভেদে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ৪ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাজু বাদাম ১ হাজার ৮০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২৫০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৬৪০ থেকে ৭০০ টাকা, জয়ত্রী ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি।