সাত দিনে মামলা ১৬৯৪, জরিমানা ৭২ লাখ টাকা

ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক নিশ্চিতে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। আইন না মানায় গত ৩০ নভেম্বর থেকে গতকাল রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত সাত দিনে অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক হাজার ৬৯৪টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৭১ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ টাকা।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের প্রথম দিন ৩০ নভেম্বর ১৬১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এদিন সারা দেশে মামলা হয় ৩৮০টি। জরিমানা হয় ২০ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা।
দ্বিতীয় দিন ১ ডিসেম্বর ১৫৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৩৪৬টি মামলা ও ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ২ ডিসেম্বর মামলা হয় ৩০৮টি এবং জরিমানা করা হয় ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ৩ ডিসেম্বর মামলা হয় ১১১টি ও জরিমানা করা হয় সাত লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর আজম বলেন, ‘সারা দেশে এ অভিযান মূলত জেলা প্রশাসকদের তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত করা হয়। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন থাকায় বেশ কয়েকটি জেলায় অভিযান শিথিল রাখেন জেলা প্রশাসকরা। এ কারণে গত শুক্রবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ছিল ৩০টি এবং গত শনিবার ছিল ৫৭টি। গতকাল রোববার থেকে অভিযান পুরোদমে চলছে।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অভিযান পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ৩০টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সারা দেশে মোট মামলা হয় ৫৫টি এবং জরিমানার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা।
৫ ডিসেম্বর ৫৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। মোট মামলা হয় ১২৯টি আর জরিমানা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৪০০ টাকা।
গতকাল রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত ১২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোট মামলা হয় ২৫৬টি। জরিমানা করা হয়েছে আট লাখ ১৭ হাজার ৯০০ টাকা।
আলমগীর আজম আরো বলেন, ‘বাধ্যতামূলক মোড়কীকরণ আইন, ২০১০’ কার্যকর করতে কাজ করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। অভিযানের অধীনে সারা দেশে ১০টি পর্যবেক্ষক দল কাজ করছে। ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) মহাব্যবস্থাপক (বাজারজাতকরণ) ও বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রধান মুজিবর রহমান মল্লিক বলেন, ‘ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে শতভাগ পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু রাতারাতি সবাই পাটজাত মোড়ক ব্যবহার করবে তা নয়, সময় লাগবে।’
চাহিদা ও জোগান প্রসঙ্গে মুজিবর রহমান বলেন, ‘বিজেএমসির স্টকে আগের এক কোটি চার লাখ ৪০ হাজার পাটের ব্যাগ রয়েছে। সম্প্রতি উৎপাদন করা হয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৮টি ব্যাগ। বর্তমানে জমা আছে প্রায় প্রায় আড়াই কোটি বস্তা। এর সঙ্গে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় পাঁচ লাখ বস্তা। এজেন্টদের চাহিদার সঙ্গে আমাদের সরবরাহের কোনো কমতি নেই। সারা দেশের ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী বিজেএমসির গুদাম ও সারা দেশের মিলের মাধ্যমে এক মাস ধরে পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
আইন অনুযায়ী খাদ্য অধিদপ্তরের ধান, চাল ও গমের মোড়কীকরণের ক্ষেত্রে শতভাগ পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। তফসিলভুক্ত পণ্য ভুট্টার মোড়কীকরণেও শতভাগ ভাগ পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে।
রাইস মিল বা চাতাল মালিক ও চালের দোকানদারদের পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে শতভাগ পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। দেশে উৎপাদিত ও আমদানীকৃত শতকরা ৫০ ভাগ সারের পাটজাত মোড়ক ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার না করে কোনো ব্যক্তি কৃত্রিম মোড়কের ব্যবহার, বিক্রি, বিতরণ বা সরবরাহ করলে বা করার অনুমতি দিলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সাজা দ্বিগুণ হবে।