ভোটে নিরাপত্তা, সংসদীয় আসন বৃদ্ধিসহ নানা দাবি নারী নেত্রীদের

ভোটে নারীদের নিরাপত্তা, সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি এবং সরাসরি ভোটগ্রহণসহ নানা দাবি তুলেছেন নারী নেত্রীরা।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে এসব দাবি জানান তারা।
নারী নেত্রী শিরিন হক বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সংসদে আসন বৃদ্ধি হয়নি। সেখানে আমরা বলেছি ৩০০ আসনের পরিবর্তে ৬০০ আসন করতে হবে। একটি নির্বাচনের আসনে দুটি আসন থাকবে। যেখানে একটিতে শুধু নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আরেকটিতে নারী-পুরুষ যে কেউ করতে পারবেন। পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি সমর্থন করি।
বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবীর বলেন, যে পদ্ধতিই হোক না কেন নারীদের সরাসরি নির্বাচন অবশ্যই চাচ্ছি। আবার ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। এই নির্বাচনে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হলে তারা সংসদে ভূমিকা রাখতে পারবেন। ‘মব ভায়োলেন্স কালচার’ নারীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নেতিবাচক দিক হতে পারে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারী বিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এই তিনটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। প্রার্থীদের মানবিক গুণ থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে মব ভায়োলেন্স ও নারী নির্যাতন হয়, সেসব এলাকার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখলে নারীরা নিরাপদ বোধ করবেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারীবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী—এই তিনটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। প্রার্থীদের মানবিক গুণ থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে মব ভায়োলেন্স ও নারী নির্যাতন হয়, সেসব এলাকার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখলে নারীরা নিরাপদ বোধ করবেন। নির্বাচন ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ করতে হলে যে স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের মানসিকতাকে জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন যাতে হয়, সেটা আমরা চাই। নারী প্রার্থীরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রচার-প্রচারণা করা হয়, নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা করা হয়। এবারও আমরা এমন শঙ্কা করছি এবং নারী যারা ভোটার তারা অনেক ধরনের হুমকির মুখে থাকেন। এ জায়গায়গুলো কীভাবে বন্ধ করা যায়, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকবে।
উইমেন ডেভেলমমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মিষ্টি আশরাফুন নাহার বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সময়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলসহ যত অংশীজনের সঙ্গেই কথা বলেছি সেখানে আমরা নারীর সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে দ্যার্থহীনভাবে সমর্থন পেয়েছি। সংরক্ষিত নারী আসন যত সংখ্যাই হোক, সেটা যেন অবশ্যই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেন একটি সম্মানজনক শতাংশ প্রার্থী দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি বলেন, ঝুঁকিপ্রবণ হামলা নাশকতা ঘটার শঙ্কা থাকে, সেখানে বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হোক।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মাহা মির্জা বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে অনেক সময় ভোটারদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। বিশেষ করে নারী শ্রমিকের একটা অংশ ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারেনি। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময়ও তাদেরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। নারী শ্রমিকরা অনেক সময় ছুটি পায় না, অন্তত দুই দিনের ছুটি নিশ্চিত করার বিষয়ে ইসির কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য ফ্রি বাস ও রেলসেবা দিতে হবে। ঢাকা শহরে বাসায় যারা কাজ করছে তাদের ছুটি দেওয়া হয় না, এটা নিয়েও কাজ করতে হবে।
এতে আরও অংশ নেন বেইস ক্যাম্পে সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরিন পারভীন হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ইন্টার নিউজ বাংলাদেশের শামীম আরা শিউলি, নারীপক্ষের সভাপতি গীতা দাস প্রমুখ।