বর্জ্যের শ্রেণিবিভাগ ছাড়া টেকসই ব্যবস্থাপনা অসম্ভব : ফয়েজ আহমদ
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা করতে হলে প্রথমে তার শ্রেণিবিভাগ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। শ্রেণিবিভাগের পর ধাপে ধাপে বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা করা গেলে তা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও পরিবেশের জন্য আদর্শ।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) মিলনায়তনে ‘পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান-২০২৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ এসব কথা বলেন।
‘পরিচ্ছন্ন রাখি-চট্টগ্রাম নগরী’ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এবং সিআইইউ ও ইয়ংওয়ান করপোরেশনের যৌথ আয়োজনে এই সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শ্রেণিবিভাগ ছাড়া টেকসই ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে পচনশীল এবং অ-পচনশীল এই দুটি ভাগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে বর্জ্য ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা একটি অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, আমাদেরকে মিশ্র পদ্ধতির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে যে ব্যবস্থাপনা থেকে সার আসবে, বিদ্যুৎ আসবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনটি মূলনীতি— রিডিউস (কমানো), রিইউজ (পুনঃব্যবহার) ও রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির আবর্জনা সংগ্রহের জন্য দুটি আলাদা রঙের পরিবেশবান্ধব পলিথিন বা পাত্র থাকতে পারে। আর যারা কালার ব্যাগ বা বিনগুলো ব্যবহার করবে না, তাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে একটা জরিমানা করা যেতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দূত’ আখ্যায়িত করে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, বর্জ্য ও আবর্জনা প্রশমন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত সমাধান না পেলে শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্য- যা তার বহুল আলোচিত ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের অন্যতম মূল উপাদান, তা সম্পূর্ণরূপে অর্জন করা সম্ভব নয়।
তবে, শ্রেণিবিভাগের পাশাপাশি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জরিমানা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর জোর দিয়ে ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, এর পাশাপাশি সমাজের সব অংশের অংশগ্রহণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সমাজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হলে সচেতনতার পাশাপাশি জরিমানা প্রবর্তন করা হলে পরিবেশ দূষণ কমে আসবে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, অনেকেই বর্জ্য খালে ফেলে দেয়, ছোট আকারে হলেও আমরা জরিমানা শুরু করলে নগর ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা মানসম্মত উন্নয়ন দেখতে পাবেন। মানুষ ইচ্ছমতো যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলবে আর সিটি করপোরেশন সারা দিন পরিষ্কার করবে—সেটা তো সম্ভব না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সিটি করপোরেশনকেও নিজেদের আয় বাড়াতে হবে। সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স, ব্যবসা বিকাশসহ নানাভাবে আয় বাড়াতে পারে। সিটি করপোরেশন সরকারের ওপর যত বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাবে, তত বেশি নগর সরকারের যে ফান্ড আছে সেটা পিছিয়ে যাবে। আমাদেরকে প্রমাণ করতে হবে সিটি করপোরেশন নিজের আয় দিয়ে নিজে চলতে পারে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, আমি এই বছর চট্টগ্রামে গলা পর্যন্ত পানি দেখিনি। এই যে আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে একটু রেহায় দিতে পেরেছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই।
চসিক মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরবাসীর সেবা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদনের জটিল প্রক্রিয়া চসিকের অগ্রাধিকারমূলক কাজ, বিশেষ করে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। পর্যাপ্ত অনুদান ছাড়া ৫৬টি খাল এবং ৬০০ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন শহরকে পরিষ্কার ও জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারবে না।
চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। নগর পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিআইইউ বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী খালেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, ইয়ংওয়ান করপোরেশন ও কোরিয়ান ইপিজেডের চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সুং, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।