পিআর পদ্ধতিসহ ৫ দাবিতে সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশ

পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফ দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এতে অংশ নেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এনটিভি ও এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
আবু সাঈদ রনি, রাজশাহী (সদর, গোদাগাড়ী ও পবা)
ন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেলে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার বড় মসজিদের সামনে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জামায়াতে ইসলামী বরাবরই চেয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাব খাটানোর ফলে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। আমরা দাবি করছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। ৫ আগস্ট ড. ইউনূস জুলাই ঘোষণা পেশ করেছিলেন। সেই ড্রাফটটা একটা বিশেষ মহলের প্ররোচনায় পড়ে জন-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী অনেক কিছু উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা সেটা সংশোধন করতে বলেছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন করা না হয়, তবে দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেকেই আমাদের বলছেন, আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও কেন আপনারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। তার কারণ আলোচনা করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোনো কিছুর চাপের মুখে সরকার এক শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দ্যেশে জামায়াতনেতা হেলাল বলেন, কোনো সংকট তৈরি না করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আপনারা নির্বাচন অনুষ্ঠান করুন। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে আবারও ফ্যাসিজমের জন্ম হবে, আরেকটি হাসিনা সরকারে জন্ম হবে।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নগর জামায়াতের আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী।
দলটির নগর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ও জেলা সেক্রেটারি গোলাম মোর্তুজার যৌথ সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন নগর জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, সদর আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক, নগর জামায়াতের সহকারী সেক্রটারি অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসাইন, অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকার, ব্যবসায়ী কল্যাণ সেক্রেটারি অধ্যাপক সারওয়ার জাহান প্রিন্স, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং রাজশাহী-৩ আসনের দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের দলীয় প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন প্রমুখ।
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা
খুলনা নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগর আমির খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম পরিচালনায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন।
সরকারের উদ্দেশে জামায়াতের নেতারা বলেন, আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই–তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই।
বক্তারা আরও বলেন, ‘আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেইনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি-আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ‘নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন।’ আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।’
বক্তারা সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, সবাইকে ডাকুন, কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মাধ্যমে অথবা একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এখনো সময় আছে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন করুন। কেউ কেউ বলছে যে; এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা দেখছি অনেক সাংবিধানিক মেজর ইস্যুতে যে ভিন্নমতগুলো রয়েছে, আমরা বলেছি ঐকমত্য কমিশনও বলেছে দুবারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। জুডিশিয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও হবে না। এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।
এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড় ও সঙ্গীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ি (শহীদ মীর মুগ্ধ) মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
আজ বিকেলে বরিশাল নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে কেন্দ্র ঘোষিত পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। কেননা প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা হলো পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতি নিয়ে গড়িমসি না করে প্রয়োজনে গণভোট দিয়ে পক্ষেবিপক্ষে জনমত যাচাই করুন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের এ দেশে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। এখনও প্রশাসনের মধ্যে ফাসিস্টের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে, তাদের সরিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করতে হবে। জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মু বাবরের সভাপতিত্বে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহর সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহানগরের নায়েবে আমির অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন দুলাল, সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমির মাস্টার আব্দুল মান্নান ও ড. মাহফুজুর রহমান, মহানগরীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি তারিকুল ইসলাম, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আজ বিকেলে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুয়েল, বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জরুল ইসলাম ভুইয়া, জেলা আমির মো. আব্দুল করিম, মহানগর আমির মাওলানা কামরুল আহসান, সেক্রেটারি অধ্যাপক মো শহীদুল্লাহ কায়ছার প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে টাউন হল এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগর।
আজ বিকেলে নগরীর টাউন হল মাঠে মিছিল পূর্ব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, সেক্রেটারি মু. মাহবুবর রহমান।

মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. কামারুজ্জামান সোহেলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ মাজারুল ইসলাম, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কাউন্সিলর মোশাররফ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাছির আহম্মেদ মোল্লা, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নাজমুল হাসান পঞ্চায়েত, সদর দক্ষিণ উপজেলা জামায়াতে আমির মু মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য কাজী নজির আহম্মেদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসাইন সবুজসহ অনেকে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গিয়ে শেষ হয়।