২৪ কোটি টাকার প্রকল্পেও সুপেয় পানি পাচ্ছে না শ্রীপুর পৌরবাসী

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু করে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি তদারকি করে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এরপরও সুপেয় পানি পাচ্ছে না শ্রীপুর পৌরবাসী।
এই প্রকল্পে শ্রীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি আট লাখ ৬৭ হাজার ১৯ টাকা। ১০টি পাম্প হাউস বসাতে ব্যয় হয় আট কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৭ টাকা।
প্রকল্পটির পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করে মনিরা ট্রেডার্স আর পাম্প হাউস বসানোর কাজ করে জিলানী ট্রেডার্স। এরপর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু আজও এই প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি পাচ্ছে না পৌরবাসী। এমনটাই দাবি পৌরসভার বাসিন্দাদের।
পৌরসভার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, আজিজুলসহ অনেকেই দাবি করে, এ প্রকল্প থেকে একদিনও সুপেয় পানি সরবরাহ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ২৪ কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল পায়নি তারা। এই প্রকল্পে নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার করায় বেশিরভাগ এলাকায় পাইপ লাইন ভেঙে গেছে। এমনটাও দাবি তাদের।
শ্রীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্প শুরুর দিকে আমি ছিলাম না। পরে নিয়ম অনুযায়ী আমি দায়িত্বে থাকলেও আমাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। প্রকল্পে খুবই নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। এক হাজার ৫০০ গ্রাহকের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ একটি সংযোগও নেই। ১৩৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন বিকল হয়ে রয়েছে। কয়েকটি পাম্পও নষ্ট, চালানো যাচ্ছে না। ১০টি পাম্পের মধ্যে ৯টি বুঝিয়ে দিলেও একটির কাজ এখনও চলমান। পাম্প হাউস বসানো হলে কী হবে, পুরো লাইন অকেজো।
শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহেদ আখতার বলেন, কাজ বুঝে নেওয়ার পর থেকে চালানো সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে পানি সরবরাহ লাইনের অনেক পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বসতবাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাট, গ্যাস লাইন স্থানান্তর করে পানির লাইন নষ্ট করে ফেলেছে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক সজীব আহমেদ বলেন, গৃহস্থালি কাজে পৌরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্পটির কাজ আমি যোগদানের আগেই শেষ হয়। হস্তান্তরও আমার যোগদানের আগে। আমি যোগদানের পর থেকে দেখছি, এটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের মান ও পাইপ নিম্নমানের হলে তারা কেন কাজ বুঝে নিল? কোনো জিনিস ব্যবহার না করলে সেটা তো নষ্ট হবেই।