বজ্রনিরোধক দণ্ড কেনা থেকে সরে এসেছে সরকার : দুর্যোগ উপদেষ্টা

বজ্রপাত থেকে জনসাধারণকে রক্ষার জন্য বজ্রনিরোধক দণ্ড বা লাইটিং অ্যারেস্টার কেনার উদ্যোগ ছিল, কিন্তু সেটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানান অন্তবর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন উপদেষ্টা
ফারুক ই আজম বলেন, বজ্রনিরোধক দণ্ড বা লাইটিং অ্যারেস্টার এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তেমন কার্যকরী নয়। এটা মাত্র ১০০ মিটার রেডিয়েন্টে কাজ করে। তাহলে পুরো দেশের জন্য কত দণ্ড প্রয়োজন! সেজন্য আমরা মনে করি, বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড নয়, বরং মানুষকে সচেতন করাটাই শ্রেয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, যেহেতু বজ্রপাতে আগাম অ্যালার্ট করার সুযোগ এসেছে, তাই আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি। তবে, কোন পদ্ধতিতে অ্যালার্ট করা হবে, সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাছে এখন যে প্রযুক্তি আসছে সেটাতে আমরা দুই ঘণ্টা আগে বলতে পারব, কোথায় কখন বজ্রপাত হবে।
ফারুক ই আজম বলেন, গত কয়েকদিন আগে বঙ্গোপসাগরে বড় ধরনের বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে গেছে। যদিও সেটা স্থলভাগে সেভাবে আসেনি সেজন্য তা নিয়ে আমরা তেমন একটা কনসার্ন ছিলাম না।
উপদেষ্টা বলেন, বজ্রপাতের বিষয়ে আমাদের দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এখন একটাই লক্ষ্য, কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বেশি মানুষের কাছে কম সময়ে বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা পৌঁছানো যায়।
ফারুক ই আজম বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের অভিজ্ঞদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। আগামীতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, বজ্রপাতে তথা অপঘাতে দরিদ্র মানুষজনের মৃত্যুর ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। দরিদ্র মানুষরা যদি অপঘাতের শিকার হয় তবে উচিত ক্ষতিপুরণ পাওয়া।
ফারুক ই আজম বলেন, বজ্রপাত প্রাকৃতিকভাবে হয়। আমরা চেষ্টা করছি, আগেই সতর্ক করার মাধ্যমে জনসাধারণকে জানিয়ে দিতে কোন এলাকায় কখন বজ্রপাত হতে পারে। এটার জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং এটা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষক তো আর রেডিও-টিভি নিয়ে ক্ষেতখামারে যায় না। তাই, অন্তত মোবাইলফোনের মাধ্যমে কীভাবে কৃষককে, তথা জনসাধারণকে বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা ও মৃত্যুহার বিবেচনায় সরকার ২০১৫ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে। বজ্রপাত থেকে মানুষ, প্রাণী, অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সুরক্ষায় দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই সমীক্ষা শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অধিক বজ্রপাত প্রবণ ১৫ জেলা হলো—নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও দিনাজপুর।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) নীতিমালা সংশোধন করে বজ্রপাত থেকে প্রাণহানি রোধে ১৫টি জেলায় ‘বজ্র নিরোধক দণ্ড, বজ্র নিরোধক যন্ত্র (লাইটনিং অ্যারেস্টার)’ স্থাপনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু বাস্তবতার ভিত্তিতে সেই উদ্যোগ থেকে সরে এলো বর্তমান অন্তবর্তী সরকার।