৪ বছরেও শেষ হয়নি বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণ কাজ, ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান

দীর্ঘ ৪ বছরেও নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে লক্ষ্মীপুর রামগতি আছিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে পরিত্যক্ত একতলা ভবনের একটি কক্ষে পাঠদান এবং অন্য দুটি কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলা নিচতলা এবং নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলায় শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রায় প্রতিদিনই খসে পড়ছে পরিত্যক্ত ভবনটির ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তারা ও ঢালাই। প্রতিনিয়তই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে অফিস এবং পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাসে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ৫তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের কাজ শুরু করে বীচ হাউস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানান টালবাহানায় কাজটি এখনো শেষ হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে তাগাদা দিলেও সুফল আসেনি।
নতুন ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরুর সময় চার কক্ষ বিশিষ্ট একটা আধাপাকা ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এর ফলে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাস করতে হয় খোলা আকাশের নিচে এবং পরিত্যক্ত স্থানে। বর্ষায় এ দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদেরকে। জোড়াতালি দিয়ে মাত্র চারটি কক্ষে প্রতিদিনকার পাঠদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
১৯৬৮ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষাদানে ব্যাঘাত ঘটায় গত চার বছর ধরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন থাকা ভবনের কারণে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রাখায় একমাত্র খেলার মাঠটিও ব্যবহারের অনুপযোগী।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি ভবনটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি নানামুখী বিশেষ করে অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালে পাঁচ তলা ভবনের কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা ভবনটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একই সময়ে শুরু হওয়া আশপাশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো যথাসময়ে শেষ হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদেরটা বুঝে পাইনি। এতে আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা জরাজীর্ণ একটি ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ভবনের ছাদ থেকে ঢালাই খসে পড়ছে। আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। আশা করি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহসাই আমাদেরকে ভবনটি বুঝিয়ে দেয় তাহলে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দিদার হোসেন বলেন, বিষয়টা নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম শওকতের সঙ্গে কথা বলেন। আমিও ওখানে গিয়েছি, বলেও আসছি। ওখানে যে ঠিকাদার আছে তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমি ইউএনওকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আপনি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাহলে বিষয়টি বেশি ইফেক্টিভ হবে। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (রামগতি) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, একতলা ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যবহার করতে নিষেধ করেছি।
নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, খুব বাজে একটি ঠিকাদার পেয়েছি আমরা। তিনি নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর-ফেনী এ অঞ্চলের না, ঢাকার ঠিকাদার। যার কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করাটা একটু জটিল প্রক্রিয়া। আমরা তাদের অনেকভাবে চিঠি দিয়েছি। এখন কাজের গতি অনেকটা বেড়েছে।
নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি, এক-দেড় মাস কিংবা দুই মাসের মধ্যে কাজটা শেষ করতে পারব ইনশাআল্লাহ্।