‘আমার মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে বাকি জীবন অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব’
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ক্যামেরা ট্রায়ালে জবানবন্দি দেন তিনি।
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে যে নৃশংসতার বর্ণনা দেখেছি, তাতে আমি রাজসাক্ষী হওয়াটা যৌক্তিক।’ কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে স্বজন হারানো পিতা-মাতার আহাজারি, লাশ হত্যার পর নৃশংসভাবে পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্য দেখে আমি ব্যথিত, লজ্জিত ও অনুতপ্ত এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন।’ এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি চাকরি। সবসময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সবসময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরি জীবনের শেষপর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালে সংঘটিত হয়েছে, তার দায় আমি স্বীকার করছি। আমার সত্য বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকি জীবনে কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই পাঁচটি অভিযোগে তাদের বিচার করা হচ্ছে। অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গত ১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ আমলে নেন।