আশুলিয়ায় ব্যবসায়ীকে বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

ঢাকার আশুলিয়ায় সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসায়ী আমির হোসেন সরকারকে (৫৪) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। ‘এজাহারভুক্ত’ আসামি না হয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় কারাগারে তিনি। এমনটাই অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
আশুলিয়া সরকার মার্কেট এলাকার মৃত হাজি আমিন উদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যবসায়ী আমির হোসেন সরকার। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। তার সঙ্গে নানা বিষয়ে বিরোধ চলছিল মেজো ভাই এমারত হোসেন সরকারের। এমনটাই দাবি তার পরিবারের।
গত ১৪ আগস্ট বিকেলে আশুলিয়ার আড়াগাঁও দোসাইদ এলাকা থেকে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে আমির হোসেন সরকারকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাভারে বার্নিশ মিস্ত্রি মুজাহিদ হত্যা মামলায় (সাভার মডেল থানার মামলা নং-১০, তারিখ-২৩ আগস্ট, ২০২৪) সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
আমির হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের ঢাকা জেলা উত্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ১৫ আগস্ট সকালে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি খিচুড়ি বিতরণ করবেন–এমন তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমির হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন- এমন অভিযোগও করেন তিনি।
ওসি জালাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘এক ভাইয়ের সঙ্গে আমির হোসেন সরকারের বিরোধের বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে। আমরা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অপরাধী না হলে তিনি রেহাই পাবেন। আমাদের প্রভাবিত করার সুযোগ নেই।’
এদিকে ডিবির এই মামলায় কারগারে থাকতেই ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৭ আগস্ট আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান ভুইয়া আমির হোসেন সরকারকে আরেকটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন,‘আমির হোসেন সরকার আওয়ামী লীগ করতেন। কোনো পদে ছিলেন কি না তা জানা নেই। তবে তার সঙ্গে অনেক আওয়ামী লীগনেতার ছবি আছে। তার পরিবার আমার কাছে এসেছিল। আমি শুনেছি তার ভাইদের সঙ্গে বিরোধ চলছে। যদি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তদন্ত করে বিষয়টি দেখা হবে।’
ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা ও আইনজীবী জানান, সম্পূর্ণ ভুয়া মামলায় ষড়যন্ত্র করে তাকে সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে। আশুলিয়া ও সাভার মডেল থানায় করা দুটি মামলার গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। স্পর্শকাতর বিধায় এসব মামলায় এখন স্বাভাবিক জামিন হচ্ছে না। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনে আপন ভাই এমারত হোসেন সরকারের সরাসরি ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি স্বজন ও আইনজীবীর।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এমারত হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার ভাইকে কেন পুলিশ ধরেছে তা আমার জানা নেই। ২০২১ সাল থেকে আমি অসুস্থ। আমার ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে। এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে পারব না।’
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপিনেতা ও আশুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের জানা মতে আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই আমির হোসেন সরকারের বাড়ি। তারা তিন ভাই কোনো রাজনীতির সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিল না। নিজেরা ব্যবসা বাণিজ্য করে খায়। তবে এভাবে নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসানো আমরা কখনো সমর্থন করি না। এতে সমাজে বৈষম্য ও অবিচারের সংস্কৃতি তৈরি হয়।’
সাভার থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন,‘আমির হোসেন সরকারকে কখনো আওয়ামী লীগ করতে দেখিনি। ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। স্বভাবতই সে সময় যারা সরকারি দলে ছিল তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে,তাকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিতে হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন,‘মিথ্যা মামলায় কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এ বিষয়টি আমার গোচরে আসার পর তা নিয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার স্পষ্টবার্তা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা নিয়ে কোনোভাবেই নিরীহ কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা যাবে না। মামলা বা গ্রেপ্তার বাণিজ্যের বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’