চাঁদপুরে সুইমিংপুল বন্ধ সাত বছর, হয় না প্রতিযোগিতা বা প্রশিক্ষণ

কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ, জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন, তারপর ধীরে ধীরে অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার শিকার। চাঁদপুরের আউটার স্টেডিয়ামে অবস্থিত জেলার একমাত্র সুইমিংপুলটির করুণ চিত্র এটি। ২০০৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ‘অরুন নন্দী সুইমিংপুল’ নামে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা এই পুল সাত বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
একসময় সুইমিংপুলটি শিশু-কিশোরদের সাঁতার প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতায় মুখর থাকলেও এখন সেখানে ধুলো-বালু আর জীর্ণতার ছাপ। দীর্ঘদিন পানির মেশিন বিকল থাকায় পুলে নেই পরিষ্কার পানি, বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশ। এছাড়া ভেঙে গেছে পুলের টাইলস, পুল প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
ক্ষুব্ধ ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়রা বলছেন, জাতীয় মানের সাঁতারু তৈরির যে স্বপ্ন নিয়ে এ প্রকল্প, তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত স্থাপনাটি আজ পরিত্যক্ত হয়ে আছে।
গত দুই বছর ধরে সুইমিংপুলটি সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এর অংশ হিসেবে নতুন গ্যালারি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে পুল, টাইলস ও অবকাঠামো এখনো অপরিষ্কার ও জীর্ণ অবস্থায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে এই সুইমিংপুলটি নির্মিত হয়। প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্যালন পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ স্থাপনাটি চালু করতে এখন নতুন পানির মেশিন, সরঞ্জাম এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনগুলোর দাবি, দ্রুত সংস্কার করে সুইমিংপুলটি আবার ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হোক।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিয়ান বলেন, আমি চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে প্রতিদিন খেলতে আসি কিন্তু কখনো সুইমিংপুল খোলা দেখিনি। এখানে চারপাশ অপরিচ্ছন্ন। আমি নিজে সাঁতার জানি না, তবে সুইমিংপুলটি চালু হলে আমি এখানে এসে সাঁতার শিখতে পারবো। আমি এবং আমার বন্ধুরা চাই দ্রুত সুইমিংপুলটি চালু করে দেওয়া হোক, যাতে আমরা সাঁতার শিখতে পারি।
স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল বলেন, সুইমিংপুলটি থেকেও না থাকার মতো। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে কোনো প্রতিযোগিতা হয় না, কোনো শিশু-কিশোর এখানে সাঁতার শিখতে পারে না। সুইমিংপুলের আশপাশের পরিবেশ যেন ভুতুরে রূপ নিয়েছে। নতুন করে সুইমিংপুলের সংস্কারকাজে হাত দেওয়া হলেও সেই কাজ চলছে খুবিই ধীর গতিতে।
সাবেক জাতীয় সাঁতারু ও চাঁদপুরের সাঁতার প্রশিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ খান বলেন, চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সুইমিংপুলটি পুনরায় চালু করা হোক। জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের জানিয়েছে সুইমিংপুলটির কাজ শেষ হলে দ্রুত তা চালু করা হবে।

চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য কে এম সালাউদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই চাঁদপুরে ক্রীড়াঙ্গনে শুধু বরাদ্দ এনে লুটপাট করা হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। তেমনি চাঁদপুরে জাতীয় মানের সুইমিংপুল তৈরি করা হলেও নানা কারণে অরুন নন্দী সুইমিংপুলটি বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। যার কারণে এখানে কোনো প্রতিযোগিতা হয় না এবং চাঁদপুর শহরের ছেলেমেয়েরা সাঁতার শিখতে পারছে না। কাজ চলছে ধীরগতিতে। আমরা চাই সব কাজ শেষ করে সুইমিংপুলটি পুরোপুরি সাঁতার শেখানো এবং প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তোলা হোক।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, বর্তমানে সুইমিংপুলটির সংস্কার কাজ চলছে। আমরা কয়েকবার এটি পরিদর্শন করেছি। শুধু তাই নয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টিমও এখানে এসে পরিদর্শন করে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার। বিশেষ করে এই বছরের মধ্যে সুইমিংপুলটি পুরোপুরি প্রন্তুত করার টার্গেট রেখেছি।