ফরিদপুরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা

ফরিদপুরে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের দাম বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণে দাম বেড়েছে এক হাজার টাকা পর্যন্ত, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহেদুজ্জামান জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হলো ফরিদপুর। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার টন। মৌসুমের সময় প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন চাষিরা। তবে তারা দাবি করেছিলেন, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী লাভের জন্য দর হওয়া উচিত ছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
হঠাৎ করেই গত ১০ দিনে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে, যা খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পৌঁছেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এমন পরিস্থিতি। জেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা বলছেন, বর্তমানে অধিকাংশ কৃষক পাটের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ কমে গেছে।
কানাইপুরের ব্যবসায়ী তপন কুমার বলেন, বাইরের (বিদেশি) পেঁয়াজের আমদানি এখন নেই। দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহও তুলনামূলকভাবে কম, ফলে দাম বেড়ে গেছে।
বোয়ালমারীর পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, চাষিরা এখন পাট ধোয়া, শুকানো ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত। তাই বাজারে পেঁয়াজ আসছে কম।
সালথার সাইফুর রহমান বলেন, মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায়নি। এখন বড় চাষি আর আড়তদারদের হাতে যে পেঁয়াজ আছে, তারা মজুত রেখে দাম বাড়িয়ে লাভ করছেন।
জেলার কানাইপুর, সালথা, বোয়ালমারী ও নগরকান্দা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়। এমন দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
ফরিদপুর শহরের চকবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী সাইদা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটা খুবই কষ্টকর।
চাকরিজীবী রহমতউল্লাহ বলেন, বাজারের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাজারে তদারকি কার্যক্রম চলছে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত মজুত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।