নির্বাচনি প্রচারে এআই-ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), ড্রোন (কোয়ার্ডকপ্টার) বা এ ধরনের কোনো কিছু কোনো প্রার্থী, তার এজেন্ট, সমর্থক, গণমাধ্যম বা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
এআইয়ের প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এআইয়ের অপব্যবহার (মিসইউজ) ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে— এআই তো না, এটা একটা টুলস। প্রবলেমটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন, ম্যাল ইনফরমেশন। এটা হচ্ছে প্রবলেম।
তিনি বলেন, মিসইনফরমেশন বলতে মিথ্যা কথা— কোনো উদ্দেশ্য নাই, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যেটা আমাদের ক্যাজুয়াল বিহেভিয়ারের জন্য হয়ে থাকে। আমি একটা উপাত্ত পেলাম, ভেরিফাই করলাম না সত্য না মিথ্যা, আমি শেয়ার করা শুরু করলাম। এটা হচ্ছে মিসইনফরমেশন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডিসইনফরমেশন যেটা সুপরিকল্পিতভাবে করা। অর্থাৎ, একটা মিথ্যা কথা অসৎ উদ্দেশ্যে আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি। আর ম্যাল ইনফরমেশন হচ্ছে— এটা সত্য কথা, কিন্তু আমার ছড়ানোর কথা না, আমি ছড়িয়ে দিচ্ছি।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এই তিনটার মধ্যে বিশেষ করে ডিসইনফরমেশন— এটার কারণে মূলত এআই বেশি ব্যবহুত হয়। মনে করেন, একজন ব্যক্তির ভয়েসকে ক্লোন করে একটা কিছু করল বা একটা ভিডিও তৈরি করল বা যেকোনো অডিও ভিজুয়াল কন্টেন্ট তৈরি করল যেটা সত্য নয়। যেটা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বলেন, ইলেকশন ইন্টিগ্রিটি বলেন, প্রতিপক্ষ আপনার প্রার্থীকে বলেন বা দলকে বলেন— হেয় করার উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। এগুলো প্রতিহত করার জন্য আমরা আচরণবিধিতে সংযুক্ত করেছি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, মনে রাখবেন, এই আচরণবিধিটা শুধুমাত্র কিন্তু প্রার্থী ও দলের জন্য। কিন্তু এআইয়ের ব্যবহার তো এদের বাইরেও লোকজন করবে। অনেক এনটিটি আছে যারা এটা করবে। শুধু তো রাজনৈতিক দল আর প্রার্থীরা করবে না। দেশ থেকে করবে, দেশের বাইরে থেকে করবে। তো সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমরা একটা কমিটি ফর্ম করেছি ইতিমধ্যে। তারা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), ড্রোন (কোয়ার্ডকপ্টার) বা এ ধরনের কোনো কিছু কোনো প্রার্থী, তার এজেন্ট বা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনেরও ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। যদি প্রয়োজনীয়তা আসে তখন আমরা আলোচনা করব। গণমাধ্যমও ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ কোনটা গণমাধ্যমের আর কোনটা গণমাধ্যমের না, চিহ্নিত করা অনেক ডিফিকাল্ট।
কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের ভাবনার বিষয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। অলরেডি তিন-চারটা মিটিং করেছি। একদিনের জন্য সিসি ক্যামেরা আউটসোর্স করেও পাওয়া যায় না ভাড়াতে। আবার কেনাও যৌক্তিক নয়। ৪৫ হাজার কেন্দ্রে আপনি হিসাব করে দেখেন, কতগুলো সিসি ক্যামেরা লাগবে। এটা কিনে আপনি রাখবেন কীভাবে? অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। এমন হতে পারে ইতিমধ্যে কেনা যে সিসি ক্যামেরাগুলো আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেগুলোকে ইন্টিগ্রেট করে কিছু করা যায় কিনা। আমাদের একটা টিম কাজ করছে।
এমনও প্রস্তাব এসেছে, যদি এগুলো আমরা কিনে দেই বা অন্য মন্ত্রণালয় যদি কিনে দেয়, তাদেরকে দিয়ে দিলাম। নির্বাচন কাজের জন্য এটা ব্যবহৃত হলো। আর ভাড়ায় যদি পাওয়া যায়, কিন্তু এত ক্যামেরা ভাড়া দিবে কে আপনাকে? আবার একদিনের জন্য এটা ব্যবহৃত হলে, পুরানো হয়ে যাবে। এই দায়-দায়িত্ব নেবে কে?
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা আলোচনা করেছি আউট অফ কান্ট্রি ভোটিং। প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যাপারে আউট অফ কান্ট্রি ভোটিং এবং ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং নিয়ে আলোচনা করেছি। অর্থাৎ, ব্যালট পেপারের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যারা ভোট দেবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। এটাই আজকের মূল আলোচ্য ছিল। আপনারা জানেন, প্রবাসে আমাদের বাংলাদেশি ভোটার যারা আছেন তাদের এবার ইনশআল্লাহ ভোট দেওয়া আমরা নিশ্চিত করতে চাই এবং এর মাধ্যমটা হবে পোস্টাল ব্যালট।