রাজধানীর তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক লিজ দেওয়ায় পবার নিন্দা ও প্রতিবাদ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশানন্থ শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক পুনরায় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা। একইসঙ্গে দখলকৃত মাঠ উদ্ধার করে সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি ও ভোগকারী প্রতিষ্ঠান হতে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে মাঠ, পার্ক জলাধার আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবার সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বুধবার (৩০ জুলাই) এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় সামাজিক এ সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, “শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক পুনরায় দখলদার গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের বিবৃতিতে জানা যায়, ৫ম করপোরেশন সভায় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সাথে ডিএনসিসির শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছিল। ক্লাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল ৮ম সভায় চুক্তিটি পুনর্বহাল করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্ক। আদালতের নির্দেশনা এবং মাঠ, পার্ক ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে দখলদার একটি ব্যবসায়িক ক্লাবকে জনগণের মাঠ প্রদানের সিদ্ধান্তে পবা তীব্র নিন্দা জানায়।
বিগত সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্তৃক শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কসহ ৪টি মাঠ অপারেটর নিয়োগের নামে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। বিগত সময়ে অপারেটর নিয়োগের নামে এই মাঠগুলো বিভিন্ন ক্লাব, প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেয় সিটি করপোরেশন। শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক-ইয়ুথ ক্লাবকে, চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ- শহীদ যায়ান চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিষদকে, কামাল আতাতুর্ক পার্ক- গ্লোবাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এন্ড কনসালটেন্সি লিমিটেডকে, বনানী সি ব্লাক পার্ক- এস বি মার্বেল করপোরশনকে দেওয়া হয়। ক্লাব ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে মাঠ ভাড়া দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এ প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন ও ক্লাবসমূহ মাঠ-পার্ক আইন লঙ্ঘন এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেছে।
শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কের দখলকারী গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠ দখল করে বেআইনি স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করলে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো তীব্র আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জনদাবী উপেক্ষা করে ক্লাবকে তাদের বেআইনি কাজ চালিয়ে দিতে সমর্থন দেয়। মাঠের বিভিন্ন স্থাপনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে এই মাঠটি দখল করে ব্যবহার করে আসছে। এই পার্ক ও মাঠ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তিনটি মামলা দায়ের ও নিস্পত্তি হয়। যার তিনটিতেই আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ রাজউককে দখল উচ্ছেদের এবং সিটি কপোরেশনকে লিজ বা দখল দেওয়া বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। সর্বশেষ মাঠ হতে ক্লাব উচ্ছেদের বিষয়ে রাজউকের নোটিশের বিরুদ্ধে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের রিট আদালত খারিজ করে দেয় এবং মাঠটি উন্মুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ তৎকালীন সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় মাঠ দখল করে নেয়। ইতোমধ্যে রাজউক মাঠটি উদ্ধারে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দিলেও এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি।
মাঠ ও পার্কটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ধ্বংস করে কিছু লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তর করছে। বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য রাখা উন্মুক্ত স্থানটি তারা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে ফুটবলের টার্ফ বানাচ্ছে। এভাবে পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্বর তারা ধ্বংস করছে এবং এই পরিবর্তনে মাধ্যমে তারা পার্কটিকে নিজেদের দখলে নিয়েছে। মাঠ ও পার্কের সকল প্রবেশ পথে নিজেদের নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। উন্মুক্ত জায়গা দখল করে ফুটবল টার্ফ বানিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে। এভাবে পার্ক ও মাঠ দখল, অবৈধ স্থাপনা তৈরিসহ বেআইনিভাবে এর প্রকৃতি ও শ্রেণির পরিবর্তন করে ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার সুস্পষ্টভাবে আইন পরিপন্থী।
আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনকে অপারেটর নিয়োগের নামে মাঠ দখলের সকল চুক্তি বাতিলে আহ্বান জানাই। একই সাথে মাঠ হতে ক্লাবের সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, মাঠটি মাস্টার প্লান অনুসারে সংস্কার, মাঠে সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ, শিশুদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত, মাঠসমূহ দখল করে সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি ও ভোগকারী প্রতিষ্ঠান হতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আহ্বান জানাই। আমরা রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে মাঠ, পার্ক জলাধার আইন সংশোধনের দাবি জানাই।”