‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটে ফেলতে পারে’
সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে ঢাকার আশুলিয়ায় ‘নারকীয় জুলাই’ প্রতিবাদ সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, শত শহীদদের রক্তের বিনিময় পতিত পলাতক পরাজিত বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওত পথ পেতে রয়েছে। সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রা পথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এই ব্যাপারে আমাদের সকলকে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মুখাপেক্ষী করা গেলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করা সম্ভব। একই সঙ্গে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে। দেশের সর্বস্তরের জনগণ কয়েকজন মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য দেড় দশক ধরে নিশ্চয়ই আন্দোলন অব্যাহত রাখেনি কিংবা জুলাইয়ের অভ্যত্থানেও শহীদ হননি। জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। সুতরাং সরকারে যখন যারাই থাকুক কেউ সরকার পরিচালনা করতে চাইলে তাদেরকে অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের আশা, ভাষা বুঝতে হবে। কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হলে তাকে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। বিএনপি জনগণের ক্ষমতায়ানের এই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়।
তারেক রহমান বলেন, শিক্ষাঙ্গণ, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এইসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহূর্তে জনগণের সামনে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি আগেও বলেছি শহীদগণ কিন্তু শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়। একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ একটি পরিবারের মৃত্যু, একটি স্বপ্ন সম্ভাবনার অবসান। প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার-আশুলিয়া কিংবা অন্য কোন সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণে পরিকল্পনা করছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ সালের অভ্যুত্থান পর্যন্ত শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আল্লাহ যেন প্রতিটি আত্মত্যাগকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে কবুল করেন, আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। একই সঙ্গে আজকে শহীদদের সম্মানার্থে তাদের পরিবারের সদস্যদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য এই অনুষ্ঠান আয়োজন যারা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পূর্বক্ষনে আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। নারকীয় হত্যাজজ্ঞের ঘটনার স্মরণে বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহপরিবার কল্যাণ বিষয়ক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবন গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু, জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু শান্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।