সোনালি আঁশ চাষে স্বপ্ন বুনছেন পাবনার কৃষকরা

দাম কমে যাওয়ায় অনেকটাই ভাটা পড়েছিল চাটমোহরে দেশের ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট চাষে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবারও ভালো দাম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে পাবনার চাটমোহরের কৃষকদের মধ্যে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের আশা জেগেছে চাষিদের মাঝে। এতে এ পাট ঘিরে স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছে কৃষকদের মধ্যে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে আট হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আবাদ বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮০ হেক্টর বেশি জমিতে। সরকারের পক্ষ থেকে পাট চাষে উৎসাহিত করতে উপজেলার এক হাজার ১০০ কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। বপন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সম্পূরক সেচে কৃষকের খরচ বৃদ্ধি পায়নি। তা ছাড়া আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও কম হয়েছে।
কৃষি বিভাগ মনে করছে, দাম ভালো পেলে লাভের মুখ দেখবে চাটমোহরের পাট চাষিরা। ভবিষ্যতে আরও অধিক জমিতে পাটের আবাদ হবে।
চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের দাথিয়াকয়ড়াপাড়া বালুদিয়ার গ্রামের পাটচাষি জিয়ারুল হক জানান, তিনি গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। মোটামুটি দাম পাওয়ায় লোকসান হয়নি। এ বছর আট বিঘা জমিতে তিনি পাটের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে, ন্যায্য দাম পেলে ভালো লাভ হবে।
মথুরাপুর ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের পাটচাষি তোজাম্মেল হোসেন জানান, ছয় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন তিনি। পাট চাষে উঁচু এলাকার কৃষকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। অনেক সময় দূরে পাট জাগ দিতে নিয়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে যায়। তবে এ বছর বর্ষা আগে শুরু হওয়ায় জাগ দেওয়ার পানির সমস্যা হচ্ছে না। আশা করছেন দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাবেন।
তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখছি পাট চাষ করে আমাদের মতো কৃষকদের সুদিন ফিরবে।’
উপজেলার কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘পাট চাষে সুদিন ফিরেছে চাটমোহরের কৃষকদের মধ্যে। সরকার পাট চাষে প্রণোদনা দেওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হয়েছে। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করায় পাটের কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পাটের বাজার মূল্যও। কৃষকরা যাতে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পায় সেজন্য বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ জানান, চাটমোহরে দিন দিন পাট চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে উন্নত জাতের পাট চাষ বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছে দাবি করে কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, ভালো দাম নিশ্চিত করা গেলে চাষিদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে। পাটচাষিরা লাভবান হবেন।