“চলতি মাসেই ‘জুলাই সনদ’ না হলে দায়ী থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন,‘আজ জুলাইয়ের ১৮ তারিখ, যদি জুলাইয়ের ভেতরে জুলাই সনদ অর্থাৎ জাতীয় সনদ প্রণীত না হয়- সেজন্য দায়ী থাকবে সংস্কার কমিশন, ঐক্যমত কমিশন এবং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমদ এই অভিযোগ করেন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সারাদেশে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে পল্লবীতে মৌন মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যারা আজকে সংস্কার কমিশনে গিয়ে আলোচনা করছে, খানাপিনা খাচ্ছে, সন্ধ্যা বেলায় চলে যাচ্ছে এবং কোনও সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না তারা কারা? তারা কেউ ১৩ দল, কেউ ১৪ দল, কেউ এমন দল যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংযোগে ছিল। তাদের বক্তব্য শুনে যদি সংস্কার কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য হবে। আমি বলছি না যে, ওখানে সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা পিআর পদ্ধতির নামে বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবি তুলছে, যারা বলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই, তাদের একটা একটি অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তারা জানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিকভাবে ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়। এখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। আমরা নিরপেক্ষ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবেই মনে করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের একমাত্র দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার দেওয়া। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব তাদের না। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো ম্যান্ডেট নির্বাচন কমিশনেরও নাই। নির্বাচন কমিশনের কেবল দুইটি ম্যান্ডেট। একটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেবলমাত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সেটা পরিচালিত হয়। সুতরাং যারা বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায় অথবা অনিশ্চিত করতে চায় তারাই বক্তব্য দিচ্ছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হতে হবে।
বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করা একটি দল এবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা। তিনি বলেন, যে দলটি সবসময়ে বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি বাংলাদেশে করেছে। এক সময়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময় জনগণের বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময়ে মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গেছে। তারা সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করে। এবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। আমি নাম নেব না, আপনারা বুঝে নেন। বাংলাদেশের মানুষ সবই বুঝে।
আরেকটি দলের কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা নাকি হাতপাখা দিয়ে ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে বাতাস করেছে তারা নাকি কোথাও পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন চায় না। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি দল, যে সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করেছে।
আর কখনও দেশে ফ্যাসিবাদে ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ঠাঁই নাই। আর কোনো শুকুনি কখনই থাবা দিতে পারবে না বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রের ওপরে। আজকে যারা নতুন নতুন বাক্য বিশারদ হয়েছেন রাজনীতিতে, নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখছেন, তাদের উদ্দেশ্যে নসিহত করছি- এই স্বপ্ন দেখা ভালো। কিন্তু মনে রাখতে হবে কেউ যদি দেশে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে চায় অথবা বিভিন্ন রকমের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্র করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসরা যেন আবার পুনর্বাসিত হয়।
গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আজকের এই বাংলাদেশে আমাদের গতিপথ নির্ধারিত হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে।