গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে পরী মণির মামলা খারিজ

অনলাইনে কুৎসা রটনা করে মানহানির অভিযোগে গৃহকর্মী পিংকি আক্তারের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা পরী মণির করা মামলা খারিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরে আলম এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো. জুয়েল বলেন, গত ২১ মে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে। একইসঙ্গে নতুনভাবে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ জারি করে। কিন্তু পিংকি আক্তারসহ চার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ও ৩১ ধারায় করা হয়েছিল। নতুন অধ্যাদেশে এই ধারায় অভিযোগ করার বিধান না থাকায় আদালত মামলাটি খারিজের আদেশ দেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল পিংকি আক্তারসহ চার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মানহানির মামলা করেন চিত্রনায়িকা পরী মণি। এ মামলায় উল্লেখ করা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সকল খবর, প্রতিদিনের বাংলাদেশ এন্টারটেইনমেন্ট, পিপল নিউজ ও ডিজিটাল খবর।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৫ মার্চ গৃহকর্মী নিয়োগ দেয় এমন একটি এজেন্সির মাধ্যমে পরী মণি তার বাসায় শিশুর দেখাশোনার জন্য পিংকি আক্তারকে নিয়োগ দেন। পরী মণির সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে পিংকি আক্তার ২ এপ্রিল বাসা থেকে চলে যায়। বাদীর অভিযোগ, এরপর থেকে পিংকি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাক্ষাৎকার দেন এবং অন্যান্য আসামিরা তা ফলাও করে প্রচার করার কারণে সমাজে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ে। এতে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হন দাবি করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন পরী মণি।
এ ছাড়া গত ২২ এপ্রিল পরী মণিসহ দুজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। শুনানি শেষে আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৮ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার অপর আসামি হলেন একই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সৌরভ।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চে মামলার বাদী পিংকি আসামিদের বাসায় কাদের এজেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহপরিচারিকার চাকরি নেন। একটি শিশুকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে এজেন্সি থেকে বাদীকে আসামিদের বাসায় নিয়োগ দেওয়া হলেও তাকে দুটি শিশুর দায়িত্ব পালন করতে হতো। এ ছাড়া বাদীকে দিন ও রাতে উভয় সময় বাসার রান্নার কাজ করতে হতো। তবুও বাদীর চাকরি একান্ত আবশ্যক হওয়ায় তিনি মুখ বুজে সহ্য করে আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল দুপুর ১টায় আসামি পরী মণি তার মেকআপ রুম থেকে মাদক গ্রহণ করে ওই শিশুর রুমে গিয়ে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী গালিগালাজ কেন করছেন জানতে চাইলে পরী মণি বলেন, ‘তুই আমার বাচ্চার জন্য দুধ কেন তৈরি করছিস, এখন ওকে সলিড খাবার দিবি।’ বাদী বলেন, বাচ্চার খাওয়ার রুটিন অনুসারে এখন দুধ খাওয়ানোর কথা, তাই আমি দুধ তৈরি করেছি।’
এসময় পরী মণি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর মাথায়, মুখে ও চোখে এলোপাতাড়িভাবে চড়-থাপ্পড় মেরে আহত করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী বাদী পিংকি পরী মণির মারধরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর বাদী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পিংকি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরী মণিকে অনুরোধ করতে থাকেন। ঘটনার সময় ২নং আসামি সৌরভ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিরা বাদীর কোনো কথা শোনেননি। উপরন্তু আসামি সৌরভ পিংকিকে নির্যাতন করার জন্য পরী মণিকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং বাদীকে বাসার বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করেন। পরে ভুক্তভোগী পিংকি ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে যান। পরে ভুক্তভোগী পিংকি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার গত ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেটির কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য না করে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।