শেখ হাসিনা অপরাধ করেননি, উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন : দাবি আইনজীবীর

জুলাই আগস্টের গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন আইনজীবী আমির হোসেন।
আজ সোমবার (৭ জুলাই) শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, জুলাই আগস্টে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়। কেননা ট্রাইব্যুনালটি গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে গঠিত অপরাধের জন্য। জুলাই-আগস্টের দেশে কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। তাই এ আইনে এ মামলা চলতে পারে না। এ ছাড়া মামলার অভিযোগের মধ্যে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।
জুলাই আগস্টের গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন আইনজীবী আমির হোসেন।
আজ সোমবার (৭ জুলাই) শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, এ ছাড়া মামলার অভিযোগের মধ্যে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। কেননা আবু সাঈদ হত্যার সময় শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। তিনি হত্যাকাণ্ডের পর দেশে এসে আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। তিনি আবু সাঈদ হত্যায় বাকরুদ্ধ ছিলেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল ছিলেন ভালো মানুষ। তিনি দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গণহত্যার সাথে শেখ হাসিনা জড়িত ছিল না। তিনি দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
পাঁচ অভিযোগ নিয়ে শেখ হাসিনার আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনা রাজাকারের বাচ্চা শব্দটা এভাবে বলেননি। তার অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি যদি রাজাকারের নাতি-পুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইতেন তাহলে তো অনেক আগেই নিতে পারতেন।
শেখ ফজলে নূর তাপসের সাথে অডিও কলের বিষয়টি সঠিক নয়। এখানে ভালো কোন ডকুমেন্ট তারা দাখিল করতে পারেননি।
ঘটনার সময় অনেক পুলিশ নিহত হয়েছেন দাবি করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা এ মামলায় সুপিরিয়র কমান্ডার ছিলেন না। তিনি দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করছি।
অপরদিকে গত কয়েকটা তারিখে প্রসিকিউটর আডভোকেট তাজুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ উপস্থাপন করে বিচার শুরুর আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হবে কিনা সে বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন।
আজ সোমবার (৭ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যে পাঁচ অভিযোগ-
অভিযোগ-১
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণে অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ।
অভিযোগ-২
আসামি শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। যা তাদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ নিরস্ত্র ৬ জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-৫
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ নিরস্ত্র ৬ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ এবং ১ জনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।