ঈদের দিনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবিহীন হাসপাতাল, রোগীদের ভোগান্তি

লালবাগ থেকে হাড় ভেঙে যাওয়া চাচাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসেছেন আকাশ নামে যুবক। তার চাচাকে জরুরি ভিত্তিতে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার প্রয়োজন হলেও তা মেলেনি, এমনকি ডাক্তারের দেখাও মেলেনি। অথচ হাসপাতালের নির্দেশনায় বলা রয়েছে, সব রোগীদের জন্য ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা সবসময়ই বহাল থাকবে।
শনিবার (৭ জুন) সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা মেলে জাহিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির। তিনদিন আগে সিলেট থেকে এসেছেন তিনি। সিমেন্টের বস্তা বহন করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা বুকে পড়ে ভেঙে যায় কয়েকটি হাড়। চিকিৎসা নিতে এতে বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও মিলছে না কোনো সেবা।
এসবের পাশাপাশি রয়েছে আরও এক গুরুতর সমস্যা। হাসপাতালে আগত অধিকাংশ রোগীর অভিযোগ, নার্সরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, পাশাপাশি সেবা প্রদানেও উদাসীনতা দেখান তারা। নার্সদের এমন ব্যবহারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীরা।
সেবা নেই বেসরকারি হাসপাতালেও
রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা নিতে এসেছেন মিমি (৩৫)। তিনি বলেন, ‘আমার শরীর খারাপ লাগায় জরুরি বিভাগে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। একজন বিশেষজ্ঞ দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখান থেকে জানানো হলো, ঈদের দিন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই।’
জরুরি দায়িত্বে থাকা ডাক্তার শাখাওয়াত জানান, ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ী ডাক্তারদের ডিউটি ভাগ করা আছে। তবে ঈদের দিন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। রোববার থেকে দুজন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকবেন।
ইবনে সিনার কাস্টমার কেয়ার থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাস্টমার কেয়ার অফিসার বলেন, ‘আমাদের সম্পূর্ণ সেবা চালু হবে ১৪ তারিখ। সব ডাক্তার ১৪ জুন থেকে জয়েন করবেন।’
ইনডোরে যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের জরুরি প্রয়োজনে কে দেখবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে রোগী যে চিকিৎসকের আওতায় ভর্তি আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা সেবা দেবেন। ঈদের দিন কোনো ডাক্তার আসেননি।’
প্রসূতি বিভাগ খোলা রাখার ব্যাপারে বলেন, ‘যদি সেরকম রোগী আসে, জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো চিকিৎসক আছেন।’
তবে শনিবার কোনো ডাক্তার এই বিভাগেও ছিল না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
একই চিত্র দেখা যায় আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। খবর নিয়ে জানা যায়, সেখানেও ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন অর্থাৎ ৮ জুন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন না। সেক্ষেত্রে সেবা নিতে আসা অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে বলে জানান সেখানকার একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য যে ১৬টি নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেটার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মইনুল আহসান ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতাল তো তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীর যদি অভিযোগ থাকে, ওয়ার্ড নম্বর ও রোগীর নাম বলে শুধু মৌখিক অভিযোগ করলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
নির্দেশনা অনুযায়ী বলা হয়েছিল, হাসপাতাল পরিচালকদের যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে হাসপাতালে অবস্থান করতে হবে। তবে চিকিৎসক সংকট বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আসাদুজ্জামান ও উপপরিচালক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদেরকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
এর আগে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য দুটি মূল নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যাতে সারা দেশে জরুরি চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত না হয়। যদিও সেসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন তেমন চোখে পড়েনি।