সরকার দেশের সম্পদ লুটপাট করে রাজকোষ শেষ করেছে : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “বিনা ভোটের সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ লুটপাট করে রাজকোষ শেষ করেছে। আমদানি করার মতো ডলার নাই। এলসি বন্ধ। সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের পাহাড় আর ১৫ বিলিয়ন ডলারের তলানিতে রিজার্ভ নামিয়ে এখন কমেডি করছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল কোটালীপাড়ায় বলেছেন, বিএনপি মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা... যেভাবেই হোক দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে।”
আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “বিনাভোটে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার ময়ূরসিংহাসন দখলে রেখে শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে আর দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার গলাবাজি করে এখন বলছেন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে বিএনপি! কি হাস্যকর কথা! বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভাবেন বোকা, অবুঝ-নাদান মুর্খ।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “গুম, খুন, লুটপাট, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট, অর্থপাচার, চাপাবাজি, মিথ্যাবাজি, সীমাহীন মূল্যস্ফীতি, ধোঁকাবাজির হাত থেকে রেহাই পেতে এবং আগেই নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য এখন ‘উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’চাপানোর ফন্দি আঁটছে সরকার। শেখ হাসিনা দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বে অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিজের অপব্যবস্থাপনা আর ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি ও বিদেশিদের ওপর অগ্রিম দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। শাক দিয়ে মাছ কি ঢাকা যায়? ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার অপশাসনে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনাহার, ধ্বংস আর তাদের পাপের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে এই মুহূর্তে এক ব্যাপক গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে।”
রিজভী বলেন, “অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, তিন মাস চলার মতো রিজার্ভ অবশিষ্ট আছে। তারপর দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। সারা দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। আসলে আওয়ামী লীগ আর দুর্ভিক্ষ একে অপরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ আনে। ৭৪ সালে যেভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগের দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার অবিচার অনিয়মের কারণে দেশে এখন আবারও সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। সব রকমের নৈতিক অনাচার সৃষ্টিকারী দল আওয়ামী লীগ। এরা দস্যুতামূলক বলপ্রয়োগের দ্বারা জনগণকে দমন করে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ হলো নিতান্তই কুৎসিত, বিদ্বেষ, আধিপত্যলিপ্সা, নিষ্ঠুরতা ও দুর্ভিক্ষসহ দেশকে বিষাক্ত করে তোলার দল। যদি দুর্ভিক্ষ আসে তাহলে সেটা হবে শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্র ও জুলুমের ফসল। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রের বাসন্তী ও দুর্গাদের কথা জাতি ভুলে যায়নি। আওয়ামী বাকশালিদের আরাম-আয়েস আর ভোগবিলাসের কারণে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। কলাপাতায় দাফন হয়েছিল। মাছ ধরার জাল পরে এদেশের মা-বোনদের লজ্জা নিবারণ করতে হয়েছিল। এখন শেখ হাসিনার দুঃশাসনের এই ভয়াবহ সময়ে অসংখ্য বাসন্তী-দুর্গারা ঘুরছে পথেঘাটে। মানুষ তিন বেলা খাবার জোটাতে পারছে না। ক্ষুধার জ্বালায় ত্রিশ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করেছে মা। তাই এক্ষুণি এই সর্বভূক লুটেরা খুনি দুঃশাসক দুরাচারী সরকারকে হঠাতে না পারলে দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তরে প্রাণ হারাতে হবে বেঘোরে। পথে ঘাটে পড়ে থাকবে লাশের সারি। তাই আজ ভোটাধিকার, সরকারের গুম-খুন-অপহরণ-জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের জনগণ রাজপথে মরণপণ লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়লাভ করতেই হবে।”
আগামীকাল রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “মানুষকে গুম খুন অপহরণ করে, গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ বানিয়ে, কারারুদ্ধ করে বিনাভোটে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছেন। আন্তর্জাতিক তদন্ত ও সমালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।”
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, “গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে আজ সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মন্তুদ পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী পুলিশ সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। টেনেহিঁচড়ে বের করে দিয়েছে। সরকার তাদের কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে। আজকে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না।”
রিজভী বলেন, “আসুন সাহস, আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের দিকে ধাবিত করি। গণতান্ত্রিক শক্তির কল্পনা ও আশা সর্বদা সজিব, সক্রিয় ও বিকাশশীল। তাই বর্তমান আদর্শের সংগ্রামে আমরাই বিজয়ী হবো।”