ফরিদপুরের চার আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের ঘোষণা

ফরিদপুরের চারটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণায় ভোটের হিসাব নতুন করে ভাবাচ্ছে ভোটারদের। এর ভিতরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চার প্রার্থীর কথা উঠে এসেছে জোরেসোরে। তারা এরই মধ্যে এলাকায় তাদের নিজ সমর্থকদের সাথে কথা বলে মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করছেন। প্রভাবশালী এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে ভোটের মাঠে হিসাবনিকাশ পাল্টে যেতে পারে এই আসনগুলোতে।
ফরিদপুর-১ আসন (আলফাডাঙ্গা, মধুখালী ও বোয়ালমারী)
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও কাঞ্চন মুন্সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন। তার কর্মী সমর্থকরা মনে করেন, ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) নির্বাচনি এলাকায় মানুষের সুখে দুঃখে সব সময় পেয়েছে দোলনকে। বিশেষ করে করোনা মহামারিসহ নানা দুর্যোগে স্থানীয় এমপিকে পাশে পায়নি তারা। এসময় দোলনকে পেয়েছে। এবারে নির্বাচনে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে দোলনকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে চেষ্টা করেছি মানুষের সুখে-দুঃখেপাশে থাকতে। তাদের ইচ্ছাতেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। মহান আল্লাহ সহায় থাকলে অবশ্যই সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং ভোটের মধ্য দিয়ে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারব। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা মোতাবেক আমি এবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষের ভালোবাসায় বিপুল ভোটের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে আমি শেখ হাসিনার কাছে এই আসনটি উপহার দিতে পারব।
ফরিদপুর-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪ জন।
ফরিদপুর-২ আসন (নগরকান্দা ও সালথা)
ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহাদাব আকবর চৌধুরী লাবু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে এবার নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সোমবার ঢাকা থেকে তার নির্বাচনি এলাকায় ফিরেই এই ঘোষণা দেন। আর এতেই এই আসনের ভোটের হিসাবনিকাশ নতুন করে ভাবাচ্ছে ভোটারদের।
এ বিষয়ে জামাল হোসেন মিয়া জানান, আমি নগরকান্দা ও সালথা মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে ছিলাম। সামনের দিনে থাকার জন্য আমি বুধবার কিংবা বৃহস্পতিবার আমার মনোনয়নপত্র দাখিল করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে দলীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আর সেই দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমি এবার প্রার্থী হচ্ছি। আশা করি আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে এই আসনে উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখব। বিজয়ী হয়ে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দেব।
ফরিদপুর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৪ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৫ জন।
ফরিদপুর-৩ (ফরিদপুর সদর)
সব সময় ফরিদপুর-৩ আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে আজাদ। গতকাল সোমবার রাতে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির, অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শাহ আলম মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল ইসলাম নিরুসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সহস্রাধিক সমর্থক।
সভা শেষে এ কে আজাদ উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ফরিদপুর অঞ্চলে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়নের ধারার সূচনা করেছেন সেটি অব্যাহত রাখতে ও আমার সমর্থকদের কথা বিবেচনা করে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা, চিকিৎসা এসব খাতে কাজ করতে চাই আমি। বিশেষ করে শিল্পে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। অল্প শিক্ষিত ও শিক্ষিত বেকার সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে আমি রাজনীতিতে আগ্রহী হয়েছি। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম, সেটা না পেলেও আমি স্বতন্ত্রভাবে সংসদ সদস্য হয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে চাই।
ফরিদপুর-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ১০৮ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৩৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৭১ জন।
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন)
ফরিদপুর-৪ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত থেকেছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এই আসনে ফের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ।
এর আগে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। দুইবারই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন নিক্সন চৌধুরী। কিন্তু এবার এই আসনের নিক্সন সমর্থকরা আশা করেছিলেন নিক্সন পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা হয়নি। এবারও নৌকা উঠেছে কাজী জাফর উল্লাহর হাতে।
এ বিষয়ে নিক্সন চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে নৌকা চেয়েছিলাম আমি পাইনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। সেদিক বিবেচনা করে আমি এবারও এই আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। এই আসনের জনগণ আমাকে চায়। কারণ প্রতিটি বিপদে-আপদে আমি তাদের পাশে থেকেছি। করোনাকালীন সময়ে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি তখন আমি এ এলাকায় ছুটে বেরিয়েছি প্রতিটি বাড়ি বাড়ি। আমার সংসদীয় আসনের মানুষ আমার প্রতি আস্থা রাখেন। আর আমি তাদের আস্থার মূল্যায়ন সব সময় করার চেষ্টা করি। আশা করি এবারের নির্বাচনেও তারা আমাকে বিপুল ভোটের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মত বিজয়ী করবেন।
ফরিদপুর-৪ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৬২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৯১ জন।