পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগামী মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশ সফরে জলবায়ু পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।

নয়াদিল্লিতে জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের পর ম্যাক্রোঁ ঢাকা সফরের উদ্যোগ নেওয়ায় তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

বুধবার (৩০ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি এলে বাংলাদেশ তাকে স্বাগত জানাবে।’

তবে ম্যাক্রোঁ কবে ঢাকায় আসবেন, সেই তারিখ উল্লেখ করতে চাননি তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনও দিন চূড়ান্ত করতে পারিনি। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

এই সফরের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখন পর্যন্ত আসেনি। এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ড. মোমেন বলেন, ‘নারী ক্ষমতায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন আলোচনার জন্য স্বাভাবিক বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা। এ বিষয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।’

বাংলাদেশ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উত্থাপন করবে এবং জলবায়ু তহবিলকে ব্যাপকভাবে কার্যকর করতে চাইবে।

আসন্ন সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ছাড়াও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। উভয় নেতার নয়াদিল্লিতে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন। সফরে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ কৌশলগত দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিত রাজনৈতিক পরামর্শের মাধ্যমে তাদের অংশীদারত্বের উন্নয়ন ও গভীর করার জন্য তাদের অভিন্ন ইচ্ছার কথা তুলে ধরেছে।

ওই সময় উভয় দেশ রাজনীতি ও কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এছাড়া উভয় দেশ প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে টেকসই ও বাস্তব সহযোগিতার গুরুত্বকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। দুই দেশের অংশীদারত্বের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স। সেই লক্ষ্যে, উভয় দেশ সংলাপ জোরদার করতে এবং তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে, বিশেষ করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে, যা ওই সফরের সময় চালু হয়েছিল।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় দুই দেশ। উভয় দেশই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সম্মতিপত্রে সই করেছে। আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এবং সবার জন্য অভিন্ন সমৃদ্ধির ভিত্তিতে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য একমত পোষণ করেছে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ।