দুর্ঘটনার কবলে পুলিশের গাড়ি, নিহত ৭

গাজীপুরের পুলিশ ও আসামি বহনকারী লেগুনার সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষে সাতজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন আসামি, পুলিশের একজন কনস্টেবল ও একজন লেগুনাচালক রয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পোড়াবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
লেগুনায় করে আসামি বহন করার ঘটনায় শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোতালেবকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। urgentPhoto
দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন পুলিশের কনস্টেবল মোস্তফা কামাল (৫৫), শ্রীপুর থানার নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা লেগুনাচালক মমিনুল হক (২৮), একই উপজেলার বরমী দাইপাড়া টেক এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে সোহেল (২০) এবং মানিক (২৮), সোহরাব (২২), মাসুদ (২৪) ও মনির (২৬)।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের জানান, আজ দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর থানা থেকে বিভিন্ন মামলার ১৩ জন আসামি নিয়ে ছয়জন পুলিশ সদস্য একটি লেগুনায় করে গাজীপুরের আদালতে আসছিলেন। সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পোড়াবাড়ী এলাকায় এলে বিপরীত দিক থেকে একটি কাভার্ড ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন হতাহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে।
পুলিশ সুপার জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। কাভার্ড ভ্যানটি আটকের চেষ্টা চলছে।
শ্রীপুর মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, স্থানীয় লোকজন হতাহতদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখান থেকে গুরুতর আহত পুলিশের কনস্টেবল মোস্তফা কামাল (৫৫), আশরাফ (৪২) ও জুলহাস (৩০) এবং আসামি সাইফুল ইসলাম (২০) ও মনির হোসেনকে (২২) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কনস্টেবল মোস্তফা কামাল মারা যান বলে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার রেজাউল হাসান জানিয়েছেন।
আহত অন্যরা হলেন তোফাজ্জল (৩৫), কামাল হোসেন (৪০), মোবারক (৪২), আনোয়ার হোসেন (২৫), শরীফ মিয়া (১৮), তামিল হাসান তুহিন (২১) ও পুলিশ কনস্টেবল আবদুল মান্নান (৫২)। এঁদের মধ্যে ছয়জনকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান জানান, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছয়জনের লাশ রয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিন পুলিশ সদস্য ও দুই আসামিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি পাঁচজনকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন
আসামিদের আদালতের পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে বহন করা কথা। সেই সাথে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়ি থাকার কথা। কিন্তু আজ আসামিদের বহনের জন্য লেগুনা ব্যবহার করা হয়েছে। একটি লেগুনায় ১২ জন যাত্রী বসতে পারেন। সেখানে ১৩ জন আসামি নিয়ে ছয়জন পুলিশ সদস্য লেগুনায় ঠাসাঠাসি করে রওনা দিয়েছিলেন গাজীপুর আদালতে।
নিহতদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, গাড়িতে না নিয়ে ভঙ্গুর লেগুনাতে ঠাসাঠাসি করে এত মানুষ নেওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন। নিহত এক আসামির স্বজন দাবি করেছেন, তাঁর ভাতিজার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ জানান, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আবদুল মোতালেবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সদর) আশরাফুল ইসলাম ও পরিদর্শক আসাদুর রহমান। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।