তদন্ত কর্মকর্তাকে অথর্ব বললেন ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এক কর্মকর্তাকে অথর্ব বলে ভর্ৎসনা করেছেন আদালত। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ ভর্ৎসনা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান। এদিন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার একটি অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মাহিদুর ও আফসার এর আগে শাস্তি ভোগ করলেও সেই ঘটনায় নতুন করে অভিযোগ গঠন করায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ব্যর্থ ও অথর্ব বলে ভর্ৎসনা করেন। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন জেড এফ আলতাফুর রহমান। তাঁর পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রধান আব্দুল হান্নান রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের দুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অধিকাংশ বিচারকের রায়ে ২ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ১৯৭২ সালের দালাল আইনে তিন নম্বর অভিযোগে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। তারা শাস্তিও ভোগ করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন না করে অভিযোগ গঠন করে তদন্ত কর্মকর্তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য তাদের ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো। এসময় ব্যর্থতার পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাদের অথর্বও বলেছেন ট্রাইব্যুনাল।
একই বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার বলেন, ‘দালাল আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে যদি হাইকোর্টে আপিল করা না হতো, তাহলে ওই রায়ের কোনো রেকর্ডই পেতাম না। তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সব নথি লুকিয়ে ফেলেছেন। আমরা সাক্ষীদের জেরা করার সময় তদন্ত কর্মকর্তার কারসাজির বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেছি। এ কারণে বাকি দুটি অভিযোগের বিষয়েও সন্দেহ থেকে যায়।’
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি এ মামলায় নিযুক্ত প্রসিকিউটরও ভুল করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি প্রসিকিউটরও দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘একজন প্রসিকিউটর যুদ্ধাপরাধ মামলার ক্ষেত্রে নিজেই তদন্ত করতে পারেন। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৭ (ক) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি একটি ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত হন, তবে তাকে অন্য ইস্যুতেও মামলার মুখোমুখি করা যাবে।
’৭২-এ তাদের বিরুদ্ধে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল হত্যা মামলা। কিন্তু ’৭১ সালে তারা আসলে গণহত্যা করেছিল। এ গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিচারের বিষয়টি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি, যে কারণে আজ আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যর্থ বলে তিরস্কার করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুলমাঠে ও এর আশপাশে সংগঠিত গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করা হয়। গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর রহমান ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসার হোসেন চুটুকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।