শিবগঞ্জের মাহিদুর আফসারের রায় কাল

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার সকালে এ দিন ধার্য করেন। বেঞ্চের অপর বিচারকরা হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষামাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। urgentPhoto
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এ মামলাটি এর আগে শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। আজ আদালত রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মাহিদুর-আফসারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাঁদের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। অন্যদিকে গত ১৫ ও ২০ এপ্রিল মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা জেড এম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১০ সাক্ষী।
অন্য সাফাই সাক্ষীরা হলেন মো.আহসান হাবীব, মো. মহিবুল হক, রইস উদ্দিন, জাকারিয়া, মো. মোখলেসুর রহমান, মো. ফসি আলম সান্টু, মো. খুদি, মহসীন আলী ও দাউদ হোসেন। অন্যদিকে মাহিদুর-আফসারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।
গত ১২ জানুয়ারি মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের পক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও বিপক্ষে শুনানি করেন তাঁদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৬ নভেম্বর এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।
এ দুজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। পরদিন ২৮ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত শেষে সাত খণ্ডে ৯৫৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুল মাঠে ও এর আশপাশে সংগঠিত গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করা হয়। গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর রহমান ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসার হোসেন চুটুকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।
রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে থানার আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ দখল করে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন। এর পর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।