ছিটমহলবাসীর সুযোগ নিশ্চিতে আগ্রহী স্থানীয় প্রশাসন

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হলে ভারতের অধীনে থাকা ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা হবেন বাংলাদেশের নাগরিক। আর তখন এ দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ছিটমহলের উন্নয়নে কাজও করতে চান তাঁরা।
urgentPhoto
লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন মতামত পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের সড়ক ধরে হাঁটলে দেখা যায়, পাকা বাড়ি, পাশেই রয়েছে কেটে রাখা ধান। চোখে পড়ে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রয়াসে ধান থেকে চাল করার প্রক্রিয়া। সহজেই বোঝা যায় সুখী পরিবার। কিন্তু ‘আসলেই কি তারা সুখী?’
জানতে চাইলে ওই পরিবারটির স্ত্রী বলেন, ‘হামার (আমার) তো নিরাপত্তা কোনো নাই। হামরা ভারতেরও নাগরিক হবার পারি না, বাংলাদেশেরও নাগরিক হবার পারি না। হামার জীবন মনে করেন গেছেই। আর যে হামার তিনটে বাচ্চা আছে, তিনটে বাচ্চা নিয়ে তো বৃত্তিপালন করবার গেলে তো হামার জীবন তো সুখী হতে হবে।’
ওই নারী মনে করছেন, বাংলাদেশের নাগরিক হলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাঁরা। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ হলে আমরা খুব সুবিধা করতাম আর কী। লেখাপড়া, চিকিৎসাপাতি এইসব।’
দাসিয়ারছড়ার বেশির ভাগ বাড়ি দেখেই বোঝা যায়, তুলনামূলকভাবে তারা সচ্ছল। তার পরও ক্ষোভের কথা শোনা গেল এ গ্রামের মানুষগুলোর কাছে।
কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলার সময় একজন বলেন, ‘অনেক কষ্ট, গরিব লোকের খুব কষ্ট। ইলিপ (রিলিফ) নাই, কোনো সাহায্য নাই, কোনো স্কুল নাই, মাদ্রাসা নাই, আমার খুব অসুবিধা, ক্লিনি (ক্লিনিক) নাই। স্বামী নাই, কোনো ভাতা নাই, আমি কিচ্ছু করতে পারি না।’
এখানকার নারীরাও বাংলাদেশের নাগরিক হতে দারুণ আগ্রহী। একজন বললেন, ‘ভারত তো অনেক দূরত, বাংলাদেশ তো নিকটে। এটাই চাই।’
স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে দীর্ঘ বঞ্চনার পর অবশেষে মুক্তির আনন্দ। ছিটমহলের নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আকাশসম প্রত্যাশা। তাঁদের এই প্রত্যাশার প্রাথমিক ধাপ পূরণ করতে পারেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, ছিটমহলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের জন্য।
কীভাবে ছিটমহলবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন, তা জানতে চাইলে লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ এনটিভিকে বলেন, ‘ছিটমহলের অধিবাসীদের কাছে যাব এবং তাদের সমস্যার কথা জানব। এবং তাদের...দীর্ঘদিন যাবৎ তারা যে বঞ্চিত ছিল সুযোগ-সুবিধা থেকে, সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রদানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ এনটিভির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং যারা আছে, তাদেরকে আমি গতকালকেই বলেছি, যে সকল সুযোগ-সুবিধা আমাদের নাগরিকদের জন্য একটা প্রশাসন নিয়ে থাকে, সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো কী কী তাদের লাগবে তা দেখা।’
ছিটমহলবাসীর দাবি, খুব তাড়াতাড়িই যেন তাঁরা পেতে পারেন সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। দীর্ঘ বঞ্চনার পর অবশেষে নাগরিক অধিকার ফিরে পেতে যাচ্ছেন ছিটমহলের এই মানুষগুলো। তবে তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে প্রশাসনকে। আর তা না হলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা হবে তীব্রতর।