ময়মনসিংহ বিভাগের এক বছর পূর্তি, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

দেশের অষ্টম ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তি কাল ১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য টানা ২৬ বছর আন্দোলনকারী সংগঠন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ‘ময়মনসিংহ বিভাগ : প্রতিষ্ঠার এক বছর- প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৭৮৭ সালের ১ মে ময়মনসিংহ জেলা এবং ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠার ১৮৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহকে বাংলাদেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর গত এক বছরে ১৮টি বিভাগীয় অফিস চালু হয়েছে। আরো কয়েকটি বিভাগীয় দপ্তর শিগগির চালু হবে। ময়মনসিংহ বিভাগকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশের অন্যতম দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে আরেকটি নতুন আধুনিক পরিকল্পিত শহর গড়ে উঠছে। সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় বিভাগীয় অফিসগুলোর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ মহানগর পুলিশ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াও চলমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছায় দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের সব দপ্তর দ্রুত চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম কমিশনার হিসেবে জি এম সালেহ উদ্দিন যোগদান করেন ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর। তিনি জানান, বিভাগের গেজেট হওয়ার পর গত এক বছরে ১৮টি বিভাগীয় দপ্তর চালু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার, ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টসহ আরো কয়েকটি বিভাগীয় কর্মকর্তা খুব শিগগিরই যোগ দেবেন। বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিসহ বিভাগীয় অফিসসমূহ স্থাপনের জন্য ১১৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন বিভাগ থেকে এই জমি দ্রুত অধিগ্রহণ করা হবে। আগামী ২০১৭ সালে বিভাগীয় বিভিন্ন অফিসগুলোর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে বিভাগীয় কমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের উন্নয়ন বিষয়ে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরকে দৃষ্টিনন্দন, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ১৭টি নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী রেল ব্রিজসংলগ্ন একটি সেতু, শহরের কাচারীঘাট জিরো পয়েন্টসংলগ্ন একটি এবং খাগডহর দিয়ে একটিসহ মোট তিনটি সেতু দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য সড়ক পরিবহন সচিবকে এবং নদের ওপারে নতুন শহর রক্ষার জন্য সড়কসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে পুনরায় পত্র দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
জি এম সালেহ উদ্দিন ২০১৭ সাল থেকে নবম শ্রেণি ও একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের কার্যক্রম শুরু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের প্রথম উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যোগ দেন ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ। তিনি জানান, পুলিশের নতুন রেঞ্জ হওয়ার পর মাঠ প্রশাসনে জোরদার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। এতে কাজের গতি অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের ন্যায়বিচার আরো দ্রুত নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নতুন নতুন কৌশল প্রদান করা হচ্ছে।
ডিআইজি আরো জানান, জঙ্গিবাদ দমন, জুয়া ও মাদকসহ নানা অপরাধ দমনে পুলিশ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। নবগঠিত রেঞ্জে ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তাদের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ মহানগর পুলিশ (এমএমপি) গঠনের জন্য এরই মধ্যে ময়মনসিংহ সদর উপজেলাসহ মুক্তাগাছা উপজেলার কিছু অংশসহ একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এমএমপির জন্য আটটি থানা, মহানগর পুলিশ লাইন্স, আরআরএফ পুলিশ লাইন্স, এমএমপি সদর দপ্তর, জোনাল ডিসি অফিস, জোনাল এসি অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চলতি বছরের শুরুতেই আইজি অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান জানান, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিসহ বিভাগীয় অফিসগুলো স্থাপনের জন্য ১১৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও নয়া বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন অফিসের অবকাঠামো স্থাপনের জন্য চার হাজার ৩৬৬ একর জমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাবপত্রটি এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্রুত জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হবে।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান বলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তি হয়েছে। কিন্তু এই বিভাগ যিনি করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেননি। তিনি অবিলম্বে ময়মনসিংহে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাগীয় সদর দপ্তরের ভিত্তি স্থাপনসহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি চান একটি আধুনিক ও সুন্দর বিভাগীয় শহর গড়ে তুলতে। তাই দ্রুত সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরকে দৃষ্টিনন্দন, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ১৭টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো মানসম্মত এবং দ্রুততার সঙ্গে শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা জরুরি। এই কমিটি প্রতি দুই মাস পরপর সভা করে সার্বিক কাজকর্মের মূল্যায়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য টানা ২৬ বছর আন্দোলনকারী সংগঠন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে ১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ‘ময়মনসিংহ বিভাগ : প্রতিষ্ঠার এক বছর- প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা শহরের টাউন হলে অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, ডা. এম আমান উল্লাহ, ফখরুল ইমাম, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, শরীফ আহমেদ, আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, জুয়েল আরেং ও ফাতেমা জোহরা রানী, বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান। অতিথি হিসেবে থাকবেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ম হামিদ, বিভাগ বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আমিনুল হক শামীম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ।