কেশবপুরে পানিবন্দি ৯ হাজার পরিবার, ক্ষতি ৯০ কোটি টাকা

যশোরের কেশবপুরে অবিরাম বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও কেশবপুর পৌরসভা এলাকার নয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন। এর মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে চার হাজার পরিবার এবং পৌরসভায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
পানির তোড়ে ভিটামাটি ছেড়ে আসা আড়াই শতাধিক পরিবার যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল এলাকার টোং ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পরিবার কেশবপুর বালিকা বিদ্যালয় ও কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ১১টি ইউনিয়নের জন্য ১৯ টন এবং কেশবপুর পৌরসভার পানিবন্দি মানুষের জন্য পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মৎস্য ঘের, সবজি ক্ষেত, অবকাঠামো, ধানিজমি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৩৬ লাখ ১১ হাজার টাকা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অবিরাম বর্ষণে উপজেলার এক হাজার ৮৩৮টি মাছের ঘের, এক হাজার ১০২টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যাতে অবকাঠামোসহ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ৩০৮ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস জানান, অবিরাম বর্ষণে তিন হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির আউশ, আমন, সবজি আবাদ বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ টাকা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে যে, ২২টি গরুর খামার ও ৩২টি পোলট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মিরাজুল আশরেকীন জানান, অবিরাম বর্ষণে উপজেলার ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলে ৪০টি প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর জানায়, বন্যায় যশোর-সাতক্ষীরা সড়কসহ ১৭টি সড়কে পানি উঠে গেছে। এ ছাড়া মাছের ঘেরের পাশের ৩৮টি গ্রামীণ সড়ক ইটের সোলিং ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে পড়েছে।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল জানান, পৌর এলাকার পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌর এলাকা। এখানকার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আলতাপোল মাছ বাজার, গমপট্টি, সাহাপাড়া, মধ্যকুল, সরফাবাদ, ভবানীপুর, হাবাসপোল এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলা জানান, ইউনিয়নের আলতাপোল, মাগুরাডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গাসহ পাঁচটি গ্রামের গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পাঁজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা মনোহরনগর, পাঁজিয়া, রাজনরবাঁকাবর্শি গ্রামে সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে কাঁচাঘর বাড়ি ধসে পড়ছে।
কপোতাক্ষ নদতীরের ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, ইউনিয়নের চাদড়া, বরণডালি, মির্জানগর, সরসকাটি ও সাহাপুর গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইউনিয়নের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবীর সাংবাদিকদের জানান, প্লাবিত এলাকার মানুষদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন মিলে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এর মধ্যে কেশবপুর পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে পানিবন্দিদের জন্য ২৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।