পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরে তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন

উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোত এবং পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এক সপ্তাহে জেলার জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১০ গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
মাত্র দুই রাতের ভাঙনে পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়েছে একটি বাজার। পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা মানুষগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
মাত্র এক মাস আগে ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে শেষ করা নদীতীর রক্ষা বাঁধটি কোনো কাজেই আসেনি। পানিতেই ‘খেয়ে ফেললো’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এতগুলো টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ২৪ জুলাইয়ের পর থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি অস্বাভাবিক গতিতে ঢুকে পড়ে শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলে। বন্যার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রবল স্রোতের কারণে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের দুর্গার হাট এলাকা, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর, কালু ব্যাপারির কান্দি, চোকদার কান্দি, হাজি মকবুল খালাসির কান্দি, খেঁজুরতলা, মোমিন খালাসির কান্দি, ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসনসুর মোল্যার কান্দি, আলম খাঁর কান্দি, আহমদ মাঝির কান্দি, ওকালদ্দিন মুন্সির কান্দি গ্রামের তিন শতাধিক বসতবাড়ি গত সাত দিনে বিলীন হয়েছে। তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান স্টেশন বাজারটিও ভেঙে গেছে মাত্র দুই রাতে। এই বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছুটা অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারলেও বেশির ভাগ স্থাপনাই নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জাজিরার কুন্ডেরচরের ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্যার বাড়ির সামনে থেকে ৮০ ফুট নদীর তীর জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় করা হয় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। মাদারীপুরের জাহিদ এন্টাপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী তীর সংরক্ষণের কাজটি করে। এর পুরোটাই এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জাজিরা কুন্ডেরচরের রিজিয়া বেগম, আবদুস সাত্তার চোকদার, আনোয়ার ফকির, বাদশা মিয়া, ভেদরগঞ্জের তারাবুনিয়ার খোরশেদা বেগম, নুরুল আমিন মৃধা, বাদল মিয়া ও সাহেরা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি সব পদ্মা নদী গ্রাস করেছে। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন। কেউ খোঁজ নিতে যায়নি বলে অভিযোগ তাদের।
স্টেশন বাজারের মাছের আড়তদার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ করে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে আমাদের বাজারের অন্তত ৩০টি দোকানঘর পদ্মা নিয়ে গেছে। আমরা দোকানগুলো কোনো জায়গায় সরানোর সুযোগ পাইনি।’
কুন্ডেরচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্লা বলেন, ‘আমার নিজের বাড়িটা চোখের সামনে পদ্মা নদী গিলে খাইলো। অসহায়ের মতো শুধু দেখলাম। কিছুই করার ছিল না। বর্ষার স্রোতের মধ্যে মাত্র এক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমার বাড়ির সামনে মাত্র ৭০-৮০ ফুট জায়গায় বালুর বস্তা ফেলেছে। তাও এখন নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।’
শরীয়তপুর পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, নদী ভাঙন এখন সবচেয়ে ভয়াবহ ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। শরীয়তপুরের নদী ভাঙার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তিনশ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘকালের এই সমস্যা দূর হবে।