আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আলবদর বাহিনীর জামালপুরের উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ রোববার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ সুনির্দিষ্ট পাঁচটি ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। অভিযোগ আমলে নেওয়া প্রশ্নে আগামী মঙ্গলবার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, এই আটজনের বিরুদ্ধে করা তদন্ত প্রতিবেদন গত ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এই আটজন হলেন আশরাফ হোসেন (৬৪), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (৭১), মো. আবদুল মান্নান (৬৬), মো. আবদুল বারী (৬২), মো. হারুন (৫৮), মো. আবুল হাশেম (৬৫), অ্যাডভোকেট শামসুল হক (৭৫) ও এস এম ইউসুফ আলী (৮৩)।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আট রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ৯২ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনসহ ৫৯৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিল। ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্তকাজ শুরু করে ২৪ মার্চ শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। মামলায় ঘটনার ৩৪ জন ও জব্দ তালিকার ছয়জনসহ মোট ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় আসামিরা অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্থানীয় পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলা, সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ এবং ৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।
মতিউর রহমান আরো জানান, আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া অ্যাডভোকেট শামসুল আলম এবং এস এম ইউসুফ আলী স্থানীয় জামায়াত নেতা। অন্যদিকে প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মামলাটি দায়েরের পর থেকেই তিনি পালিয়ে রয়েছেন। পলাতক অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই অভিযান চালিয়ে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়িয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে কারাগারে থাকা এ দুই আসামিকে তদন্তের স্বার্থে গত ৬ মার্চ সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা।