আড়াই বছরে ময়মনসিংহে শিশু-কিশোরসহ নিখোঁজ আট

ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গা থেকে গত প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময়ে শিশু-কিশোরসহ আটজন নিখোঁজ হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এর একটি তালিকা তৈরি করেছে। তারা কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরেই তৈরি করা হয়েছে এ তালিকা।
নিখোঁজ তালিকায় আছেন ফুলবাড়ীয়ার জোড়বাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (২৮)। তাঁর বড় ভাই আবু সাঈদ জাহাঙ্গীর জানান, সাখাওয়াত ফুলবাড়ীয়া আল হেরা একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ফুলবাড়ীয়া মহাবিদ্যালয় পড়ার সময় ২০০৪ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। চাকরিরত অবস্থায় প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন সাখাওয়াত। তাঁর সর্বশেষ পোস্টিং ছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১২তে। গত বছর ১৮ ডিসেম্বর অফিসে যাওয়া কথা বলে রাত ৯টায় বাড়ি থেকে বের হন সাখাওয়াত। দুই ঘণ্টা পর রাত ১১টার সময় র্যাব তাদের বাড়ি তল্লাশি করে ল্যাপটপ ও মোবাইল সিম নিয়ে যায় বলে জানান সাঈদ। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ীয়া থানায় একটি জিডি (৯৮) করেছেন আবু সাঈদ।
একই উপজেলার ভবানীপুর টানপাড়ার আবদুল জলিলের ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৬) দুই বছর আগে নিখোঁজ হয় বলে ফুলবাড়ীয়া থানায় তার বাবা ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি জিডি করেন।
ফুলবাড়ীয়ার কৈয়ারচালা গ্রামের নায়েদুল্লাহ (১২) নিখোঁজ হয়েছে বলে ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ থানায় জিডি করেন তার বাবা রফিজ উদ্দিন।
চলতি বছর ১৪ এপ্রিল রাজেশ কুবি (২৪) নিখোঁজ হয়েছেন বলে ভালুকায় থানায় জিডি করেন তাঁর বড় বোন শুভ্রা কুবি। রাজেশ ঢাকার ধানমণ্ডিতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্র বলে জানান তিনি। রাজেশ শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতির বড়গজনি গ্রামের সুমিত সাংমার ছেলে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুভ্রা কুবি অভিযোগ করেন, চলতি বছর ১৪ এপ্রিল রাত ১টার সময় সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে ১৪-১৫ জন তাদের বাসায় প্রবেশ করে তাঁর অসুস্থ ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। আজ অবধি তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি।
হালুয়াঘাট আকনপাড়ার ব্যবসায়ী রিপন সাহা ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ হালুয়াঘাট থানায় তাঁর দোকান কর্মচারী আব্দুর রহমান জ্যোতি(২৮) নিখোঁজ হয়েছেন বলে একটি জিডি করেন। জ্যোতির বাড়ি কক্সবাজার জেলার উখিয়ায়।
গফরগাঁও থানার ধামাইল গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ফরহাদ মিয়া (১৬) নিখোঁজ বলে জিডি করা হয়েছে। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, আলজামিয়াতুল ঈমামদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ফরহাদ চলতি বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে পাগলা থানাধীন রসুলপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই মাস্টারের ছেলে ইয়াহিয়া সজিবের নাম। তিনি গাজীপুর ভাওয়াল কলেজের ছাত্র বলে জানায় তাঁর পরিবার। বড় বোন সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সজিব মেধাবী ছাত্র। এবার পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। গত ১০ জুন বিকেলে গাজীপুরের উদ্দেশে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরের দিন খবর নিতে গিয়ে সেলফোন বন্ধ পাওয়া যায় সজিবের। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অবশেষে এ বিষয়ে চলতি বছর ৬ জুলাই জয়দেবপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
গাজীপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গাজিপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রবিন মিয়া (২০)। গত বছর কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই তাঁর খোঁজ পাচ্ছিল না তাঁর পরিবার। ছেলে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন বলে জানান রাজ্জাক। বিষয়টি তিনি গোরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল হক সরকারকে জানিয়েছেন বলেও জানান। আজ সকালে চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে বেশ কয়েক মাস আগে বিষয়টি জানান রবিনের বাবা রাজ্জাক।’ আজ সকালে রাজ্জাক জানান, তিনি এখন ঢাকায়। আগামী রোববার গ্রামে ফিরে গৌরীপুর থানায় একটি জিডি করবেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেছেন, নিখোঁজ হওয়া মানেই জঙ্গি নয়। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ। নিখোঁজের কারণসহ তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।