কয়েকজন লোক স্বামীর কলার ধরে নিয়ে যায় : মুকুল রানার স্ত্রী

পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাতক্ষীরার শরিফুল ওরফে মুকুল রানা ওরফে হাদীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এরই মধ্যে ছোট ছেলে মজিবুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বাড়িতে গিয়ে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
মুকুল রানার শ্বশুরবাড়ি যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে। শ্বশুর মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস কৃষিকাজ করেন।
শাশুড়ি মাহমুদা বেগম জানান, তাঁদের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় দুই ছেলে জাকির হোসেন ও আমির হোসেন আলাদা থাকেন। আর ছোট ছেলে মুজিবর রহমান বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন।
মাহমুদা বেগম জানান, তাঁর ছোট ছেলে বসুন্দিয়া বাজারে একটি আয়ুর্বেদ ওষুধের দোকান চালান। তিনি আটক হওয়ার পর এখন তাঁদের সংসার চলছে খুবই টানাপড়েনের মধ্যে।
মুকুল রানার স্ত্রী মহুয়া সুলতানা পিয়ারী বলেন, ‘চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিয়ে হয়। ওই দিন বিকেলে শ্বশুরবাড়ি যাই এবং পরের দিন আবার স্বামীর সাথে বাবার বাড়ি আসি।’ মহুয়া বলেন, ‘২৩ ফেব্রুয়ারি আবার স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে রওনা হই। বসুন্দিয়া বাজারে পৌঁছামাত্রই সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক আমার স্বামীকে শার্টের কলার ধরে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আমি ভয়ে বাজারের পাশে একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে বাসায় ফোন করে বিষয়টি জানাই।’
মহুয়া বলেন, ‘ওই দিনই আমার ভাই আমির হোসেন যশোর কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন স্থানে মুকুলের সন্ধান করেও তাকে খুঁজে পাননি। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে।’
এদিকে, মুকুল আটকের ১৭ দিন পর মহুয়ার ছোট ভাই মুজিবর রহমান ঢাকায় গিয়েছিলেন ভাবির চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে। সেখান থেকে মুজিবর রহমানকেও আটক করে পুলিশ। কিন্তু কী কারণে মুকুল ও মুজিবর রহমানকে পুলিশ আটক করেছে তা ওই পরিবারের কেউই বলতে পারছে না।
মহুয়ার মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনীতির সাথে নেই। গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। সংসার চলবে কীভাবে, সেই চিন্তায় সারা দিন কেটে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সোমবার আমার শ্বশুর মোবাইল ফোনে জানান যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে মুকুল নিহত হয়েছে।’
এদিকে, মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় মুকুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুকুলের শ্বশুরবাড়ি থেকে কেউই সেখানে যাননি। মুকুলের শাশুড়ি মাহমুদা বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে আটকের পর আমরা সব কিছুই হারিয়েছি। এখন সাতক্ষীরায় যে যাব, সেই সক্ষমতাও নেই। বিষয়টি আমরা মেয়ের শ্বশুরকে ফোনে জানিয়েছি।’
মহুয়া বলেন, ‘বিয়ের চারদিনের মাথায় নিখোঁজ হন মুকুল রানা। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন কি না তা জানি না।’
বসুন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি আবু বকর খান বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস বা তার জামাই মুকুলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাতে পারব।’
তবে ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস ও তার পরিবারের লোকজন খেটে খাওয়া মানুষ। ওই পরিবারের ছোট ছেলে খুলনা আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে স্থানীয়ভাবে কবিরাজি করতেন এবং মধু বিক্রি করতেন। তাঁরা সবাই নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তেন, এখন শুনছি জঙ্গি সদস্য।’
ঢাকায় আটক মুজিবরের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। এখন ব্যস্ত, পরে যোগাযোগ করেন।’