ময়মনসিংহকে বিভাগীয় রূপ দিতে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা

দেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহ। এ বিভাগীয় শহরেই রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। শহরটিকে বিভাগীয় রূপ দিতে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে—হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাস্তার দুই পাশে সরকারি জায়গার সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, যানজট কমাতে অবৈধ ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা, মোড়ে মোড়ে ফ্রি স্পেস তৈরি, পৌরসভা আবর্জনামুক্তকরণ, শহরের কয়েকটি রাস্তা বিভাগীয় মানের করে প্রশস্তকরণ ও জলাবদ্ধতা কমাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ৬ জুন অনুষ্ঠিত সমন্বিত এক সভায় এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে পৌরসভা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি ‘নিষিদ্ধ পল্লী’ আছে। এ পল্লীর বাসিন্দাদের শহরের বাইরে পুনর্বাসন করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। সব সমস্যা রাজনীতিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীসহ সবার সহযোগিতা নিয়ে সমাধান ও বাস্তবায়ন করব।”
সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ময়মনসিংহ বাইপাস সড়ক থেকে চরপাড়া হয়ে গাঙ্গিনার পাড়, খাগডহর থেকে টাউন হল মোড় হয়ে পাটগুদাম, টাউনহল মোড় খেকে কালীবাড়ি হয়ে পাটগুদাম সড়ক প্রশস্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যানজট কমাতে পাটগুদাম ব্রিজের পশ্চিম পাড় থেকে বাইপাসমুখী ও বিভিন্ন উপজেলায় অটো চলাচলের জন্য আলাদা ইন্টারসেকশন (শর্টকাট রাস্তা/বিকল্প রুট) তৈরি করা হবে। শহরের রাস্তার নকশা অনুযায়ী প্রকৃত দৈর্ঘ্য নিরূপণ করে সীমানা চিহ্নিত পিলার স্থাপন ও প্রশস্তকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’
সামান্য বৃষ্টি হলেই ময়মনসিংহ শহরে জলজট সৃষ্টি হয়। এমনকি বিভাগীয় অফিসের সামনে, পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর ও জেলা প্রশাসনের প্রবেশপথে একফুট জলজট সৃষ্টি হয়।
শহরের জলজট দূরীকরণে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না—জানতে চাইলে সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ভরাট খাল ও ড্রেন পরিষ্কার করা হবে। সেনানিবাসের ভেতর স্থাপিত আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিবর্তে উন্মুক্ত প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ করা হবে।’
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘শহরের ১৯টি ওয়ার্ডকে পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনামুক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে ময়মনসিংহ পৌরসভা ও সড়ক বিভাগ। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করার কাজ বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চিহ্নিত সমস্যার মধ্যে এলজিইডি তাদের কর্মপরিকল্পনার আওতায় কাজ করবে।’
বিভাগের দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য নেওয়া পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন বিভাগীয় কমিশনার।
ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “প্রতিটি ট্রাফিক পোস্টের চার পাশে ‘ফ্রি স্পেস’ সৃষ্টি করা হবে। এতে যানজট কমবে। ইজিবাইক যেহেতু নিষিদ্ধ বাহন, তাই শহরে বিদ্যমান ইজিবাইকের কোনো শোরুম থাকবে না। সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। ময়মনসিংহ পৌরসভার হিসাব অনুযায়ী ইজিবাইকের সংখ্যা ৭৪৫টি। পৌর শহরের চার কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় সাত থেকে আট হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। পৌরসভার রাস্তা এতসংখ্যক ইজিবাইক ধারণ করতে পারছে না। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখা ও জনগণের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য ইজিবাইক বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। সভায় পৌরসভা ইজিবাইকের নতুন লাইসেন্স দেবে না—এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা বাস্তবায়ন করা হবে।”
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ‘নতুন বিভাগ হিসেবে সরকার ও প্রশাসনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। পর্যায়ক্রমে আরো বেশি জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রশাসন জনস্বার্থেই কাজগুলো করবে। বাধা এলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
৬ জুন সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মইনুল হক ও মেয়র ইকরামুল হক টিটুসহ বিভাগীয় কর্মকর্তারা।
সভায় নির্বিঘ্ন ঈদ উদযাপন ও চলমান আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়। এসব ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই সভার পর গত কয়েক দিনে জেলা শহরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।