বজ্রপাতে প্রাণ গেল আরো ১৩ জনের

দেশের নয় জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন।
আজ শুক্রবার বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সময় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, ঢাকার সাভার ও কিশোরগঞ্জে দুজন করে মোট আটজন এবং সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও হবিগঞ্জে একজন করে মারা গেছে। হতাহতদের অধিকাংশই বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে ছিলেন। অনেকে মাঠে কাজ করার সময় মারা যান।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশের ১১ জেলায় ৩৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। টানা দুদিনে এ নিয়ে মোট ৪৭ জনের মৃত্যু হলো বজ্রপাতে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
শাহজাহান সিরাজ মিঠু, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের সদর উপজেলার সতীঘাটা ও ক্ষেতলাল উপজেলার হাওয়ার বিল (বিলের ঘাট) এলাকায় জমির ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
এঁরা হলেন রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও মানিক হোসেন (৩৮)। এর মধ্যে মানিক ক্ষেতলাল উপজেলার ঘুগইল গ্রামের আহসানুজ্জামানের ছেলে। রফিকুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বর উপজেলার ঢেকেরপার গ্রামে।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন ও ক্ষেতলাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জানান, রফিকুল গতকাল বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম থেকে ধান কাটতে এসেছিল। আজ রফিকুল উপজেলার সতীঘাটা গ্রামের মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে তাঁর শরীরের অর্ধাংশ ঝলসে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন এসে লাশ বাড়ি নিয়ে গেছে।
অপরদিকে মানিক সকাল থেকে ক্ষেতলালের হাওয়ার বিল মাঠে কৃষক বাবলু মিয়ার জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জয়পুরহাট জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। জেলায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
মহব্বত হোসেন, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে এসব ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আনিসুর রহমান (১৪) ও মতিয়ার রহমান (২৭)।
টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক জাহিদুজ্জামান জুয়েল বলেন, উপজেলার খড়ক গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে আনিসুর রহমান জমি থেকে ধানের বোঝা আনার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
একই সময় পৌরসভার পলিশা এলাকার মোকলেছুর রহমানের মেয়ে লিমা বাড়ির উঠান থেকে ধান নেওয়ার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে তিনজন মারা যান।
জাহিদুর রহমান, সাভার : সাভারে বজ্রপাতে মন্টু মিয়া নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো দুজন।
আজ দুপুরে সাভার পৌর এলাকার ছায়াবীথি সোসাইটির বালুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুরে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ছায়াবীথির বালুর মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল স্কুলছাত্র মন্টু মিয়া। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয় মন্টু মিয়াসহ দুজন। স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মন্টু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে সকালে বজ্রপাতে ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা নয়াচরে মনির হোসেন নামের (১৩) এক কিশোর নিহত হয়েছে।
মারুফ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের তাড়াইল ও ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ দুপুরে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের ধলাপাড়া গ্রামে দুপুরে বজ্রপাতে নিহত হন ইমরান (২৮) নামের এক যুবক। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গগডা গ্রামে। তিনি ধলাপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
ধলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মবিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে একই সময়ে ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাগ গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন তারু মিয়া (৩৮)। দুপুরে আগরফা হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে লিজা খাতুন (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের রশিদপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত লিজা খাতুন রশিদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের জিন্নাহ মিয়ার মেয়ে এবং বাদুল্লাহপুর বিএমএস টেকনিক্যাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
বড়হর ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির সময়ে লিজা বাড়ির উঠান পরিষ্কার করছিল। এ সময় বজ্রপাতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বজ্রপাতে আমির উদ্দিন নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়ির পাশের হাওরে কৃষিকাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমির।
আমির উদ্দিন উপজেলার কলকলি ইউনিয়নের কামারখাল গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুরসালিন জানান, উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল গ্রামের আমির উদ্দিন মাঠে কাজ করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
কাজল বরণ দাশ, পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হাজিরহাট গ্রামে বজ্রপাতে শাহনাজ বেগম নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ রাত ৯টার দিকে নিজ বাড়ির উঠানে বজ্রপাতে মারা যান তিনি।
ভজন দাস, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা কেন্দুয়া সদর উপজেলার নূরপুর গ্রামে বজ্রপাতে সুজন দেবনাথ নামে এক কৃষক আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তিনি নূরপুর গ্রামের সুশীল দেবনাথের ছেলে।
আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বজ্রপাতে জেলার দুজন মারা যান। এঁরা হলেন পূর্বধলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের দুবারই গ্রামে রুবেল মিয়া (২০) ও কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের ভগবতীপুর গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে রই্ছ উদ্দিন (৫০)।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, চাঁদপুর ও হবিগঞ্জে বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন।
চাঁদপুর : মেঘনা নদীতে বালুভর্তি কার্গো জাহাজে বজ্রপাতে নবীর হোসেন (২৫) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একই জাহাজে থাকা মো. রাকিব (২৪) নামের অপর শ্রমিক। এ ছাড়া মেঘনায় ওসমান গনি মাঝি (৪৫) নামের এক ট্রলারচালক আহত হয়েছেন।
আহতরা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে আজ দুপুরে মেঘনা নদীতে।
নিহত নবীর হোসেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফোরকান গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে। আহত রাকিব লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার আলেকজান্ডার গ্রামের বশির মিঝির ছেলে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুনুর রশিদ জানান, নবীর হোসেন জাহাজের লস্করের দায়িত্ব পালন করতেন। ঘটনার সময় তিনি জাহাজের সামনে ছিলেন এবং আহত রাকিব সুকানির দায়িত্বরত অবস্থায় জাহাজের ছাদে অবস্থান করছিলেন। জাহাজে থাকা বাকি শ্রমিকরা ভেতরে অবস্থান করায় কেউ আহত হননি।
অপরদিকে শরীয়তপুর জেলার সখীপুর থেকে ট্রলারে চাঁদপুর আসার পথে ওসমান গনি মাঝি (৫০) বজ্রপাতে আহত হন। পরে ট্রলারে থাকা লোকজন তাঁকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে হাসপাতালে সুকানি মো. রাকিব ও ওসমান গনি মাঝি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার খোয়াই নদীর রেমা খেয়াঘাটে বজ্রাঘাতে নুর ইসলাম (৫০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুর ইসলাম উপজেলার কারিশা বস্তি গ্রামের সামছুল হকের ছেলে।
হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির জানান, দুপুরে পাহাড় থেকে বাঁশ নিয়ে খেয়া পারাপারের সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই নুর ইসলাম মারা যান।