ভবনধসের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিশুরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পাড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। যেকোনো সময় ভবনটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের ৬ শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয় ভবনটির নিচের মাটি সরে গেছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি হেলে বা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা। এ ছাড়া ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ ও শিক্ষক সংকট আছে। মাটিতে বসে এবং এক কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীদের।
ভৈরব উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনের ওপর ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৩ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় তলাটি সম্প্রসারণ করা হয়। সেই ভবনের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সম্প্রসারিত ভবনটির কাজ হয় খুবই নিম্নমানের। ফলে কিছুদিন পর থেকেই ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। ভেঙে পড়তে থাকে দরজা-জানালা ও গ্রিল।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং প্রয়োজনীয় বেঞ্চ ও শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে বলে জানালেন শিক্ষিকা আকলিমা আক্তার। প্রয়োজনীয় বেঞ্চ এবং শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে এবং মেঝেতে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বিদ্যালয়টি বহুবিদ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় সরকারের মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক। তিনি জানান, স্কুলভবনটির পেছনে একটি বিল আছে। বর্ষাকালে বিলটি পানিতে ভরে যায়। স্কুল ভবনটির প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় তখন পানির স্রোতের ঢেউ এসে ধাক্কা দেয় সেখানে। এভাবে মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। যেকোনো মুহূর্তে সেটি হেলে বা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। এ ছাড়া ভবনটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ফাটল, বেঞ্চের অভাব, পানীয় জলের সমস্যা ও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতার অভিযোগ করেন তিনি।
বিদ্যালয়টির ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাদিরা আক্তার বলেন, তিনি বিদ্যালয়টি সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছেন। ভবনটির সংস্কার ও মাটি ভরাটের জন্য এরই মধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখেছেন। আর শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়টির সমস্যাগুলোর বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিদ্যালয়টিতে বেঞ্চ সরবরাহ, সংস্কার ও পানীয় জলের সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আর শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের প্রচেষ্টা চলানো হচ্ছে।