সন্তান গেছে, ভিটেমাটিও দেবেন ঢাবিকে

ছেলে হাফিজুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন অটোরিকশাচালক ইসহাক মোল্লা। বড় আশা নিয়ে পড়াতে পাঠিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইচ্ছে ছিল হাফিজুর প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেটি হয়ে উঠেনি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় থেকে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় হাফিজুরকে। শেষে ঢাকা মেডিকেলে আনার পথে মৃত্যু হয় হাফিজুরের।
প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাবা ইসহাক মোল্লা ও মা হালিমা বেগম। এই শোক কিছুটা কাটাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাফিজুরের মা-বাবাকে ঢাকায় আনে। গত রোববার ঢাবি উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক হাফিজুরের বাবার হাতে তুলে দেন চার লাখ টাকার চেক। ওই সময় ইসহাক মোল্লা জানিয়েছিলেন, তাঁদের ভিটেমাটি ঢাবি কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেবেন। সেই ইচ্ছে বহাল আছে।
আজ বৃহস্পতিবার এনটিভি অনলাইন মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হাফিজুরের বাবা ইসহাক মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, এমন মৃত্যু যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের না হয় এই ছোট্ট আবেদন করি।’
হাফিজুরের বাবা জানান, অটেরিকশা চালিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের ব্যয় ও হাফিজুরের লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ করতেন তিনি। সঞ্চয় বলতে তাঁদের কিছুই নেই। একমাত্র হাফিজুরই তাঁদের সঞ্চয় ছিল। সেই বুকের ধন হাফিজুরই যখন নেই, তখন সম্পদ দিয়ে আর কী হবে। তাই তাঁদের মৃত্যুর পর সব সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের ইসহাক মোল্লা ও হালিমা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন হাফিজুর। সদরপুর জাকের মঞ্জিল উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে) মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন হাফিজুর। আর্থিক অনটনের কারণে ছাত্রাবাসে উঠতে পারেননি।
ছাত্রলীগের এক বড়ভাইয়ের হাত ধরে হাফিজুরের স্থান হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। সিট সংকটে তাঁকে থাকতে হয় ফ্লোরে। প্রচন্ড শীতের মধ্যে ফ্লোরে থাকায় হাফিজুর আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড রোগে। শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হলেও ছাত্রলীগের গেস্টরুম কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল হাফিজুরকে। পরে গত ২৭ জানুয়ারি অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি যান হাফিজুর। বাড়িতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের কথা জানান মা-বাবাকে।
গুরুতর অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা শেষে তাঁর নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড ধরা পড়ে। চিকিৎসরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন হাফিজুরের মা-বাবা। কিন্তু মা-বাবাকে নিঃস্ব করে ঢাকা পৌঁছানোর আগেই না ফেরার দেশে চলে যান হাফিজুর।