উদীচী বোমা হামলার ১৭ বছর, বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ

আজ ৬ মার্চ, যশোরের উদীচী হত্যাযজ্ঞের ১৭তম বার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের এই দিন মধ্যরাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময় পরপর দুটি বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক দর্শক, যাদের বেশির ভাগই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞের ১৭ বছরের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। কারা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, তাদের মুখোশ উন্মোচনও হয়নি। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হামলার শিকার ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনরা।
যশোরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, বর্তমানে এই মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ২৩ আসামির মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
পিপি বলেন, মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত যাতে চালু হয়, সে জন্য শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন।
এদিকে প্রতিবছরের মতো উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ করতে উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
হামলায় দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, ‘দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমরা হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই।’
বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘একের পর এক বছর চলে গেছে, কিন্তু উদীচী হামলায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই। এ জন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, এখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে? অবিলম্বে বিচার দাবি করছি।’
নিহত নাজমুল হদা তপনের বোন নাজমুস সুলতানা বিউটি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ বিচার হচ্ছে না। আমার মা বার্ধক্যে চলে গেছেন, মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান তিনি।’
যশোর উদীচীর সভাপতি ডি এম শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা সম্ভব নয়। তার পরও উদীচী বোমা হামলার বিচার দাবিতে আমরা সোচ্চার আছি। যশোরের মানুষ হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়নি। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করছি।’
বোমা বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিরা হলেন—নূর ইসলাম, নাজমুল হদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ।