সরকারের প্রচেষ্টায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধশালী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ নিম্ন-আয়ের বৃত্ত ভেঙে এরই মধ্যে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।’
আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের প্রথম দিন দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় সংসদের শীতকালীন এ অধিবেশন চলবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চলমান সংকট এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদ্ভূত নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও যথোপযুক্ত রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় রয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও রয়েছে সুস্থির। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় গড়ে ৯ দশমিক তিন শতাংশ। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান জাতীয় অর্থনীতির পরিচায়ক। মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ১৮৪ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।’
খাদ্য উৎপাদনের ব্যাপারে আবদুল হামিদ বলেন, ‘২০০৮-০৯ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে তিন কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। দুই কোটি দুই লাখ ৮২ হাজার ৮২৪টি কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। সরকার ১০ লাখ মেট্রিক টনের অধিক পরিমাণ আগাম খাদ্য-সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছে। আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ১৪ লাখ মেট্রিক টনেরও অধিক পরিমাণ চাল এবং দুই লাখ মেট্রিক টনের অধিক পরিমাণ গম সংগ্রহ করা হয়েছে।’
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশকে মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস ও তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে আসছে। ২৪ লাখ পরিবারকে গত চার বছরে ৪০ হাজার ৪৪৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।’
মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জনমিতিক সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৪ ও ৬ এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা ৫ অর্জনের পথে রয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পোলিওমুক্ত সনদ লাভ করেছে।’
শিক্ষা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে এসএসসি ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ ও ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎসেবার ব্যাপারে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদ্যুতের অপরিসীম গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৪ হাজার ২৭১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনগণের সংখ্যা ৭৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।’
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কাজ পদ্মা সেতুর নির্মাণকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক-যোগাযোগ সহজীকরণ, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে প্রায় আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক চার কিলোমিটার টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অচিরেই এ টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হবে।’
আবদুল হামিদ আরো বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় অতিক্রম করছি। রূপকল্প-২০২১ এবং দিনবদলের সনদের ভিত্তিতে প্রণীত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং এ কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এরই মধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এটির বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এসব লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’