ভূমিকম্পে কাঁপছে ফেসবুকও

‘শীতল ভোর। পুরো ভবন কাঁপছে। আঁতকে লাফিয়ে উঠেই টের পেলাম, কাঁপছে পুরো শহর। পরে জানলাম পুরো দেশ...। ভয়ংকর আত্ঙ্কময় সময়। বুঝতি পারছি না, এখনো কতটুকু এর ধ্বংসমাত্রা।’
আজ সোমবার ভোরে ভূমিকম্পের পরপর এভাবেই ফেসবুকে নিজের আতঙ্কের কথা লেখেন ইশরাত জাহান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
আজ বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৭ মিনিটে সৃষ্ট ভূমিকম্পে প্রচণ্ড আতঙ্ক নিয়ে জেগে ওঠে পুরো দেশ। অনেকটা ঘুমের ঘোরেই বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে যান মানুষ। কেউ খালি পায়ে, কেউ আবার ঘুমের পোশাকেই ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে আসেন। মাথার ওপর ভবন ভেঙে পড়ার ভয়ে ছোট সন্তানটির শরীরেও শীতের পোশাক জড়ানোর কথা ভুলে গিয়ে কোনোরকমে তাকে কোলে তুলে রাস্তায় নেমে আসেন মা-বাবারা। এর পর ভূমিকম্পের প্রাথমিক আতঙ্ক কাটতেই রাস্তায় দাঁড়িয়েই অনলাইন গণমাধ্যমে সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন অনেকেই।
হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বজনদের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি শুরু হয় ফেসবুক ব্যবহার। নিজের অনুভূতি-অবস্থান জানানোর পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলেরও খোঁজখবর নিচ্ছিলেন অনেকেই। গণ্যমাধ্যমের কারণে কিছুক্ষণ পর থেকেই জানা যায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এবং এর মাত্রা সস্পর্কে। এসব খবর শেয়ারের পাশাপাশি প্রকাশ করা হচ্ছিল নিজেদের খবরাখবর।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী শোবিজ তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারীও তাঁদের অনুভূতি শেয়ার করতে থাকেন ফেসবুকে। অনেকে আবার তাৎক্ষণিকভাবেই পরিবেশ ধ্বংস করে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দেশ তথা পৃথিবীকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার ফল হিসেবে এসব ভূমিকম্প হচ্ছে বলে নিজের মত জানিয়ে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ঢাকায় অবিশ্বাস্য শক্তিশালী ভূমিকম্প অনূভূত হয়েছে। আশা করি, সবাই নিরাপদ আছেন। কিছু কিছু প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ঢাকা থেকে ৩৪৬ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ৬০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। গত কয়েক মাস আগের ভূমিকম্পগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমার কাছে মনে হয়, এটি আমাদের সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা। এবং সবশেষে একটি প্রশ্ন, একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় কেন আমরা এভাবে কংক্রিটের জঙ্গল বানাচ্ছি?’
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কবি-গায়ক কফিল আহমেদ লিখেছেন, ‘রিদমটা টের পাইলাম! তবে আজ সকাল সকালই ঘুম ভাঙল সবার! আরেকটু হলে ঘুম আর ভাঙত না...কোনোদিন আর!!!'
লেখক-ব্লগার ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘তীব্র ভূমিকম্পের কাঁপুনিতে ঘুম ভাঙল। আশা করি, সবাই নিরাপদে আছেন। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র মণিপুর ভারত, সিলেট থেকে বেশ কাছে; আর চট্টগ্রাম থেকে উত্তর-পূর্বে ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে।’
গণমাধ্যমকর্মী আশীফ এন্তাজ রবি লিখেছেন, ‘ভয়ংকর শীতে রাস্তায়। হাজার হাজার মানুষ। এমন ভূমিকম্প কখনো দেখিনি।’
সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ লেখেন, “কাল রাতে যে ভয়ের মধ্যে ছিলেন আপনারা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সেই ভয় সার্বক্ষণিক হয়ে যাবে। তবে ভূমিকম্প কিংবা পরমাণু দুর্ঘটনার শক্তির চেয়ে বড় আমাদের সহ্যশক্তি। আমাদের শাসকদের দেশধ্বংসী কাজ-কারবার সহ্যের অপার ক্ষমতার জন্যই আমরা ‘আত্মঘাতী বাঙালি’! সবাই এখন একসঙ্গে আওয়াজ তুলুন রূপপুর না, রামপাল না। উন্নয়ন পরকাল নয় যে, আপনার মৃত্যুর পরে সার্থকতা এনে দেবে। আর জানেন তো, গণকবর খুঁড়তে বিদ্যুৎ কোনো কাজে লাগে না।”