বিচারকের মামলায় ময়মনসিংহের ডিসির আবেদনের শুনানি ৪ নভেম্বর

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকেরের করা ফৌজদারি মামলা স্থগিত ও বাতিল চেয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি শেষে বিচারক আগামী ৪ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
জেলা প্রশাসকের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান খান বুধবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে জানান, ১ অক্টোবর অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের ময়মনসিংহের ডিসির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ডিসির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আদেশ লঙ্ঘন, বিচারিক কাজে অসহযোগিতা ও ইচ্ছাকৃত বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ এর ৩২ (গ) ধারা, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৬৬/২০৪/২২৮ ধারায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আনিসুর রহমান খান বলেন, ‘মামলায় আনা অভিযোগ যথার্থ নয় বিধায় আমরা মামলা স্থগিত ও বাতিল চেয়ে ১৯ অক্টোবর রিভিউ আবেদন করি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মামলার শুনানি গ্রহণ করেন যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. হাবিবুল্লাহ। তবে আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে ৪ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে করা মামলার আর্জিতে বলা আছে, অর্পিত সম্পত্তি ১৫৭/২০১২ নম্বর মামলার বিচারিক কাজে মামলা সংশ্লিষ্ট ৮(ক) ৭৩-৭৪ নম্বর ভিপি মামলার নথি প্রয়োজন হওয়ায় বাদীপক্ষের আবেদনক্রমে দোতরফা শুনানির জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ বাহকের মাধ্যমে নথিটি তলব করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক ওই নথি খুঁজে পাচ্ছেন না এবং নথি খোঁজার জন্য এক মাস সময় চান। বিচারক সময় মঞ্জুর করেন। পরে আটটি নির্ধারিত ধার্য তারিখে তলবি নথি উপস্থাপন/সরবরাহ না করায় কারণ দর্শানোসহ জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীকে ২৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি হাজির হননি।
এরপর আদালতের আদেশ প্রতিপালন এবং বিচারকাজে সহযোগিতা না করার কারণে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুসারে কেন তাঁর (ডিসি) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ফৌজদারি কার্যধারা রজু করা হবে না তার কারণ দর্শানোর আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেননি। কিংবা অব্যাহতির আবেদন বা কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি। সরকারি উকিল জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীর স্বাক্ষরবিহীন দরখাস্তের মাধ্যমে সশরীরে হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা করেছেন। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আবারও সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি নথি প্রদানে ব্যর্থ হন এবং যুক্তিসঙ্গত বৈধ কারণ ছাড়াই তিনি আদালতে হাজির হননি।
মামলার বিবরণে আরো বলা হয় যে, নালিশি জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আসামির দপ্তর থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। অথচ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট ভিপি নথি তলব করার পর আসামি জেলা প্রশাসক দাবি করেছেন, নথিটি তাঁর দপ্তরে সংরক্ষিত নেই এবং নথি কোথায় আছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কাজে অসহযোগিতার মানসে এবং নালিশি জমির স্বত্বের বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ কর্তৃক সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও উল্লেখিত সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করার প্রমাণগুলো গোপন করার জন্য আসামি মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিস্কে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তলব করা ৮(ক) ৭৩-৭৪ নম্বর ভিপি মামলার নথি গোপন কিংবা বিনষ্ট করেছেন।