ভৈরবের মেঘনা নদীতে নৌকাবাইচ

‘সামাল সামাল সামাল, ওরে সামলে তরী বাইয়ো হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো’ এই ধ্বনিতে মুখর হয়ে আজ শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে হলো নৌকাবাইচ। গাঙ সমিতির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতার নাম দেওয়া হয় ‘পাওয়ার ষষ্ঠ ভৈরব নৌকাবাইচ’।
ভৈরব উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ওই নৌকাবাইচ লক্ষাধিক মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
নৌকাবাইচে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফরুল্লাহ, ভৈরবের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. সায়দুল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল মনসুর, প্রাণ বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. আনিসুর রহমান, হেড অব মার্কেটিং মো. আতিকুর রহমান প্রমুখ।
হেমন্তের মিষ্টি রোদ-হাওয়ায় উদ্ভাসিত হয়ে নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দেখতে বেলা ১২টা থেকেই নদীর পাড়ে ভিড় জমায়। কারো চোখেমুখে ক্লান্তি-শ্রান্তির রেশটকু পর্যন্ত ছিল না। নৌকাবাইচকে ঘিরে মেঘনা নদীর জোড়া সেতুর পাড় যেন লাখো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পথে এ প্রতিযোগিতা দেখতে উৎসাহী মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে উৎসব ও আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।
নৌকাবাইচ উপভোগ করতে ভৈরবের পাশের আশুগঞ্জ, সরাইল, নাসিরনগর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, রায়পুরা, বেলাব ও শিবপুর উপজেলা থেকে প্রচুর দর্শনার্থী নদীর পাড়ে ভিড় জমায়।
উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের শ্যামপুর এলাকা থেকে এ নৌকাবাইচ শুরু হয়ে শেষ হয় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত রেল ও সড়ক সেতুর ভৈরব প্রান্তে। বাইচে ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ২১টি নৌকা অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সমতাপুরের উসমান মাঝির নৌকা। চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাঁর দল জিতে নেয় একটি ফ্রিজ ও রঙিন টেলিভিশন।
আয়োজক সংগঠন স্থানীয় গাঙ্গ সমিতির সভাপতি আবদুর রউফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নৌকাবাইচ ষষ্ঠবারের মতো আয়োজন করতে পারায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানাই। গাঙ্গ সমিতি যতদিন বেঁচে থাকবে, হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্য রক্ষায় নৌকাবাইচ আয়োজন করে যাবে।’