সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মরহুম খালেকদাদ চৌধুরীর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ অক্টোবর। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার নেত্রকোনায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি নেত্রকোনা ইউনিটের আয়োজনে জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ওই স্মরণসভা হয়। খালেকদাদ চৌধুরীর কর্ম ও সাহিত্যজীবন নিয়ে বক্তব্য দেন সাহিত্যিকের ছেলে প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, লোকসাহিত্য গবেষক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, প্রেসক্লাব সম্পাদক এম মুখলেছুর রহমান খান, যুগ্ম সম্পাদক আলপনা বেগম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি নেত্রকোনা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নাজমুশ শাহাদাতের সঞ্চালনা ও শ্যামলেন্দু পালের সভাপতিত্বে স্মরণসভা সম্পন্ন হয়।
১৯০৭ সালে খালেকদাদ চৌধুরী নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁওয়ে তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালে নেত্রকোনার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে সুনামের সঙ্গে আইএ পাস করেন। পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯২২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবি বন্ধে আলী মিয়া সম্পাদিত বিকাশ পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি কলকাতা করপোরেশনের একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ১৯৪১ সালে তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৪১ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকার শিশু বিভাগ সম্পাদনা করতেন। সেই সূত্রেই কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।
খালেকদাদ চৌধুরী ১৯৬১ সালে সরকারি চাকরি ইস্তফা দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। সে সময় নেত্রকোনা থেকে ‘উত্তর আকাশ’ নামে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের করেন। তাঁর সম্পাদিত বহুল আলোচিত ‘উত্তর আকাশ’ সাহিত্য পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সে সময় নেত্রকোনায় গড়ে উঠেছিল কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের এক মিলনমেলা। এই পত্রিকায় সাহিত্য চর্চা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, জীবন চৌধুরী, শান্তিময় বিশ্বাসসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল।
কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বই পড়ার অভ্যাস ও আলোকিত মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে খালেকদাদ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ‘সৃজনী’ নামে আরেকটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তাঁর লেখা ও প্রকাশিত ডজনখানেক বইয়ের মধ্যে ‘রক্তাক্ত অধ্যায়’, ‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’, ‘এ মাটি রক্তে রাঙ্গা’ এবং ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ উল্লেখযোগ্য। তিনি বিখ্যাত ‘মরু সাহারা’ ও ‘বাহার-ই-স্তান-ই গায়েরী’র অনুবাধক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি ১৯৮৩ সালে খালেকদাদ চৌধুরীকে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর এই কৃতী সাহিত্যিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।
সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার বিকাশ এবং কথাসাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ ১৪০৩ সাল থেকে পহেলা ফাল্গুন বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে দেশবরেণ্য অনেক কবি-সাহিত্যিক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
খালেকদাদ চৌধুরীর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার মরহুমের নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ার বাসভবনে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও দরিদ্রভোজের আয়োজন করা হয়।