অবশেষে বাড়ি ফিরল ক্ষেতলালের দুই কিশোর

অবশেষে প্রায় পাঁচ মাস পর বাড়ি ফিরেছে নাহিদ ইসলাম আন্টু (১৬) ও মোতালেব হোসেন (১৫)। বাড়ি ফেরা তো দূরের কথা বেঁচে থাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল ওই দুই কিশোর। মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে দালালদের হাত ধরে অন্যদের সঙ্গে জাহাজে উঠেছিল দুই কিশোর। এরপর দালালদের মারধর, অনাহার, গভীর সমুদ্রে ছোট নৌকায় ভেসে থাকার মধ্যে কেটেছে দিন।
মিয়ানমারের সমুদ্র উপকূলে ভাসমান জাহাজের বন্দীদশা থেকে উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরকে আজ বৃহস্পতিবার তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জয়পুরহাট ইউনিট। নাহিদ ইসলাম ও মোতালেব হোসেন ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সমন্তাহার গ্রামের বাসিন্দা।
সকাল ১১টায় জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কিশোরদের তাদের বাবার হাতে তুলে দেন রেড ক্রিসেন্টের জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কে এম শহীদ ইকবাল সদু। এ সময় মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরফুল ইসলাম তালুকদার তোতা ও স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান তারেক দেওয়ানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নাহিদ ও মোতালেব এনটিভিকে জানায়, সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরি দেওয়ার লোভ দেখায় একই গ্রামের বাহাজ্জুল। দুজনের পরিবারের কাছ থেকে বাহাজ্জুল এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে নেয়। চলতি বছর ২৩ এপ্রিল অন্যদের সঙ্গে নাহিদ ও মোতালেবকেও কক্সবাজারের মহেশখালী নিয়ে ট্রলারে বসায়।
ওই দুই কিশোর জানায়, সাগরে প্রবেশের পরই দালালরা তাঁদের (মালয়েশিয়াগামী) ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে অনাহারে রাখে। পরে তাদের দিয়েই স্বজনদের কাছে ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দালালরা। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলেও মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি নৌকায় তুলে দিয়ে দালালরা ট্রলার নিয়ে চলে যায়। ভাসমান অবস্থায় তাদের দিনরাত কেটেছে।
পরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি জানায়।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১২ অক্টোবর নাহিদ ও মোতালেবকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আজ বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জয়পুরহাট ইউনিটের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার নামে ক্ষেতলালের ওই গ্রাম থেকে মোট ছয়জনকে সমুদ্রপথে নিয়ে যায় দালালরা। নাহিদ ও মোতালেবসহ তিনজন ফিরে এলেও এখন পর্যন্ত অন্য তিনজনের খোঁজ পায়নি তাদের স্বজনরা।