একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট শুরুর আগে-পরে ঝরে গেল ১৫ প্রাণ। দেশের তেরো জেলায় আজ রোববার বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে নিহতের বিষয়ে জানানো হয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়ায় দুজন, কুমিল্লার চান্দিনা ও নাঙ্গলকোটে দুজন, লক্ষ্মীপুর সদরে, নাটোরের নলডাঙ্গা, রাঙামাটির কাউখালী, রাজশাহীর মোহনপুর ও কক্সবাজারের পেকুয়া, নরসিংদীর শিবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সিলেটের বালাগঞ্জ ,গাজীপুরের হাড়িনাল ও বগুড়ার কাহালু উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটপর্ব আজ রোববার সকাল ৮টায় একযোগে শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি।

২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুবার জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোট। এবার টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এক দশক পর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটারদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে এ দুই জোটের প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটই পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করবে, নাকি পরিবর্তন ঘটিয়ে বিএনপি হারানো ক্ষমতায় ফিরে আসবে—সেই প্রশ্নেরই মীমাংসা করে দেবেন ভোটাররা। যে দল বা জোটই জিতুক, তারা আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে। 

বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

চট্টগ্রাম থেকে আরিচ আহমেদ শাহ জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-১২ আসনের পটিয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম মোহাম্মদ সাদেক (১৮)।

আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুপুর ১২টার দিকে মালিয়ারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফিরোজ ও জিয়াউল হক নামের আরো দুজন আহত হয়েছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপপরিদর্শক জসীম উদ্দিন। তিনি জানান, সকালে পশ্চিম মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পাথরের আঘাতে মারা যান সাদেক। সাদেক মাদ্রাসাছাত্র বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

নোয়াখালীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক আনসার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: এনটিভি

এদিকে, নিহত সাদেককে নিজেদের কর্মী হিসেবে পাল্টাপাল্টি দাবি করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বিএনপি।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাবেক প্রকাশনা সম্পাদক আবু তালেব বেলাল দাবি করেন, সাদেক তাঁদের কর্মী।

এদিকে, নিহত তরুণকে নিজেদের কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন এই আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন।

এর আগে সকালে ভোট শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান কবির (৩৫) নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা-এরশাদ) কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। পরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল।

ভোররাতে ভোট শুরুর কিছুক্ষণ আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বরইতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ওই ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনের লাঙ্গল প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেছেন, ‘রাত ৩টার মধ্যে এ আসনের প্রায় বেশিরভাগ ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সরকারদলীয়রা আগেভাগেই ব্যালট বাক্সে ভোট দিয়ে রাখছিল। এ পরিস্থিতিতে বরইতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে জাতীয় পার্টির কর্মী আহমেদ কবির বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে গুলি করে। গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।’

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১১০টি। এর অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রেই সরকারদলীয়রা ব্যালট বাক্সে আগে থেকে ভোট দিয়ে রাখছিল বলে অভিযোগ করেন মাহমুদুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে বাঁশখালীর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আলম জানান, কাথারিয়া ইউনিয়নে একজন নিহত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। পুলিশ ও যৌথ বাহিনী এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে কাজ করছে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।

রাঙামাটি থেকে প্রতিনিধি ফজলে এলাহী জানিয়েছেন, কাউখালী উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে বাসির উদ্দীন নামের এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। এতে উভয় পক্ষে আরো ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আজ রোববার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ঘাগরা ইউনিয়নে ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত বাসির উদ্দীন ঘাগরা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মিয়া।

কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, আহতরা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

রাজশাহী থেকে শ ম সাজু জানিয়েছেন, রাজশাহী-৩ আসনের মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে মেরাজুল ইসলাম নামের একজন নিহত হয়েছেন।

নিহত মেরাজুলকে দলীয় কর্মী দাবি করেছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিন। তিনি জানান, বেলা ১১টার দিকে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ভোটকেন্দ্র দখল করতে গেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাধা দেয়। ফলে ভোটকেন্দ্র দখল করতে না পেরে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা জাহানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মেরাজুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে।

নিহত মেরাজুল পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, আওয়ামী লীগ কর্মী মেরাজুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করা হয়। উদ্ধারের পর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

নাটোর থেকে হালিম খান জানিয়েছেন, নলডাঙ্গা উপজেলায় ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন হুসেন আলী নামের এক ব্যক্তি।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান জানান, সমসখলসী গ্রামের রতন ফকিরের স্ত্রী কাজলী বেগম ধানের শীষে ভোট দেন। এ নিয়ে চাচা হুসেন ফকিরের সঙ্গে ভাতিজা রতন ফকিরের কথাকাটাকাটি হয়।

‘এর জের ধরে ভাতিজা রতন তাঁর চাচাকে ছুরিকাঘাত করেন। গুরুতর আহত হুসেনকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’

পুলিশ জানায়, চাচা ও ভাতিজা উভয়েই আওয়ামী লীগ সমর্থক।

কক্সবাজার থেকে ইকরাম চৌধুরী টিপু জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালি উলুদিয়া এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মো. আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আজ সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো সাতজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবদুল্লাহকে দ্রুত পেকুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আবদুল্লাহকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতজনের মধ্যে চারজন ধানের শীষ ও তিনজন নৌকা প্রতীকের সমর্থক বলে জানা যায়।

নরসিংদী থেকে বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নৌকার এক এজেন্টকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতের নাম মিলন মিয়া।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শিবপুরের কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি  সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন  প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহাবুব মৃধা।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, বেলা ১১টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল হক ভূইয়া মোহন কেন্দ্র পরিদর্শন করে চলে যান। পরে দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। ওই সময় জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে নৌকার সমর্থকরা সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে একটি কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখেন। আধা ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় নৌকার এজেন্ট মিলন মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন কিছু লোক এসে বেশ কয়েকটি ব্যালট বক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সবকিছুই কেন্দ্রের সীমানার বাইরে ঘটে।

লক্ষ্মীপুর থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) নির্বাচনী আসনের একটি ভোটকেন্দ্রে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আনুমানিক  ৩৫ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ভোটের আগে গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ওই ঘটনা ঘটে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘(অপরাধীরা) কোনো অপরাধ সংগঠনের জন্য হাজির হইছে। বোরালিয়া সেন্টারের পিছে ডোবার ভেতরে তাঁর (নিহত) গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। এখন এই মৃত ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশটির কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। তদন্তসাপেক্ষে পরে বিস্তারিত জানা যাবে।’

দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র দখল করতে এসে ককটেল ফাটায়। একপর্যায়ে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি করে। সে সময় আমরা কেন্দ্রের দ্বিতীয়তলায় আশ্রয় নিই।’

দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল কবির রিপন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে এলোপাতাড়ি গুলি করছে। আমাদের ছাত্রলীগের দুজন ছেলে আহত হইছে, আর একজন গুলি করছে সে স্পটডেড। তো ওকে আমি এখনো আইডেন্টিফাই করতে পারি নাই, আসলে সে কে বা বাড়ি কোথায়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শিহাব উদ্দিন বিপু জানান, সকালে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ইসরাইল (১৯) নামের এ তরুণের মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজঘর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাঁর গাড়িতে হামলা চালিয়ে গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে ফেলে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে ইসরাইলসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাইলকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, বেলা সোয়া ১১টায় পুনিয়াউটে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সময় ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হলে বাড়ির বিভিন্ন অংশে আগুন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

অন্যদিকে, সদর উপজেলার জগৎসার গ্রামে ও মজলিশপুর আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত আটজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া সকালে শহরের নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুল ভোটকেন্দ্রে ৮/১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এদিকে, আজ অধিকাংশ কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আবদুল খালেক স্বজনপ্রীতি ও জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

কুমিল্লায় দুই নিহতের মধ্যে একজন। ছবি: এনটিভি

কুমিল্লা থেকে কাজী রাশেদ ও জালাল উদ্দিন জানান, চান্দিনার বেলাশ্বর ও নাঙ্গলকোটের সন্ধাইলে নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো একজন। আজ সকাল ১০টায় নাঙ্গলকোট ও বেলা সাড়ে ১১টায় চান্দিনায় এ দুটি ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নরুল ইসলাম জানান, নাঙ্গলকোটের বটতলা ইউনিয়নের সন্ধ্যাইল গ্রামে দুপক্ষের সংঘর্ষে বাচ্চু মিয়া নামের একজন নিহত হয়েছেন। তবে এটা নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে ঘটে।

এদিকে, চান্দিনার পশ্চিম বেলাশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা পাঁচটি ব্যালট বক্স ও পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে মজিব নামের একজন নিহত হন বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। গুলিবিদ্ধ হয় আরো একজন।

এরপর বিএনপি নেতাকর্মীরা বেলাশ্বর কেন্দ্রে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বলেও তিনি জানান। নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নোয়াখালী থেকে মো. মাসুদ পারভেজ জানান, বেগমগঞ্জের গোপালপুর উপজেলায় আজ দুপক্ষের সংঘর্ষে এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম নুরুননবী।

জানা যায়, গোপালপুর তুলাচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

দুপুর ১২টার দিকে এক পক্ষ ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্য নুরুননবী বাধা দেন। এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মারা  যান।

তাঁর মরদেহ বেগমগঞ্জ থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ সাময়িক বন্ধ ছিল। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে সিলেট থেকে মইনুল হক বুলবুল জানান, সিলেট-৩ আসনের আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সোহেল নিহত হয়েছেন।

নিহতের পরিবারের দাবি, ভোট কারচুপিতে বাধা দিতে গেলে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সায়েমের।

বগুড়া থেকে আতিকুর রহমান সোহাগ জানান, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল গ্রামে আজিজুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির জানান, নিহত ব্যক্তি আওয়ামী লীগ কর্মী।

এ ছাড়া নাজমুল হুদা ডুয়েল নামের এক ইউপি সদস্য আহত হয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। পাইকড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরীও এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর থেকে নাসির আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আজ কাজী আজিমুদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি লিয়াকত আলী (৪০) নিহত হয়েছেন। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।

এ সময় আহত হয়েছেন আরো চারজন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে সিটি করপোরেশনের হাড়িনাল এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুবলীগ নেতা লিয়াকত আলী ও তাঁর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিয়াকত আলীসহ আরো চারজন আহত হন।

আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় লিয়াকত আলীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

লিয়াকত আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘নির্বাচনমুখী লোকজনকে হামলা ও নিহতের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।