বর্তমান সরকার উন্নয়ন বলতে নিজেদের দলীয় উন্নয়ন বোঝে বলে সমালোচনা করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শিশু তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৬৪ মাস উপলক্ষে এ সমাবেশ ও আলোক প্রজ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন,  ‘এই যে শত শত হাজার হাজার মানুষের কান্না, সরকার যদি মনে করে, যে এক পদ্মা সেতুর ঢোলের আওয়াজে এই সমস্ত কান্না মুছে যাবে, এটি অসম্ভব ব্যাপার। এই বাংলাদেশে সেটি সম্ভব হবে না। আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু মানুষকে দুর্বিষহভাবে জিম্মি রেখে, তাদের কণ্ঠরোধ করে তাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে, হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আপনি যেই উন্নয়ন করবেন সেই উন্নয়ন আপনার জন্য, আপনার দলের জন্য। এটি সাধারণ মানুষের জন্য না। যেই ছাত্রগুলোকে এভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হলো, তাদেরকে যারা আহত করল, তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিলেনই না। যারা এর বিচার চাইছে, তাদের আপনারা রাস্তায় দাঁড়াতে দেন না। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই নাই। এটিকে আপনারা যদি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ। এটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ না। এটি একাত্তরের বাংলাদেশ না।’

রফিউর রাব্বি আরো বলেন, ‘আপনারা উন্নয়ন বলতে আপনাদের নিজেদের চারপাশে যারা রয়েছে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বোঝেন। উন্নয়ন মানে হচ্ছে, আপনাদের নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন,  এমপি মন্ত্রীদের ভাগ্যের উন্নয়ন। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন আপনারা সেখানে মনে করেন না।’

ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সরকার দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরেও ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে হত্যাকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। ত্বকী হত্যার বিচার চাওয়ায় ঘাতক পরিবারের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে।’

এ বিচারের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে ত্বকীসহ আশিক, চঞ্চল, মধু ও ভুলু এবং অন্যান্য সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন রফিউর রাব্বি।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাবেক সভাপতি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সংগঠনের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়।

সমাবেশে বক্তারা ত্বকীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে ত্বকী হত্যার দ্রুত অভিযোগপত্র প্রদান ও বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমশিখা প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।