বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে বিলোপ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান করতে আজ সোমবার মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন করেছে।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উপস্থাপিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খসড়া প্রস্তাব তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮৯ সালে বিনিয়োগ বোর্ড আইনের অধীনে বিনিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়েছিল। এ বোর্ডের প্রধান প্রধানমন্ত্রী। তবে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যানও থাকেন। বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনের পরামর্শ, সরকারের নীতিনির্ধারণে সহায়তা এবং বিনিয়োগকারীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা এ বোর্ডের প্রধান কাজ। এই বোর্ডের মোট জনবল ২৯৩ জন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো বেসরকারীকরণ কমিশন। ১৯৯৩ সালে বেসরকারীকরণ বোর্ড গঠিত হয়। ২০০০ সালে বোর্ডকে উন্নীত করা হয় কমিশনে। এই প্রতিষ্ঠানের লোকবল ৭০ জন। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো সরকারি সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণে সহায়তা প্রদান করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি ৫৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে তুলে দিয়েছে। ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সরকারি শেয়ার উঠিয়ে নিয়েছে (অফলোড)। তবে গত চার বছরে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, সরকারের বর্তমান নীতি, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে চলছে, সেগুলো সরকারি সহায়তা দিয়ে চালানো। ফলে বেসরকারীকরণ কমিশনের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে আমরা মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করে দিই। সেই কমিটি এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে বংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করার সুপারিশ করে এবং তারা একটি আইনের খসড়া তৈরি করে। আজ সেই খসড়া মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।’
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আরো বলেন, নতুন আইন কার্যকর হলে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে। বিলুপ্ত দুই প্রতিষ্ঠানের লোকজন নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সচিব আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাঠামো অনুযায়ী, একটি গভর্নিং বডির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। এই গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী। আর তথ্যমন্ত্রী থাকবেন ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়া শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎমন্ত্রীসহ ১৭ জন বোর্ডের সদস্য হবেন। বোর্ডের একজন সদস্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের প্রধান। এই পরিচালনা পরিষদে আরো ছয়জন সদস্য থাকবেন। এই ছয়জন হবেন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অথবা সরকারের নিযুক্ত প্রতিনিধি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্নভাবে সরকারকে সহায়তা করা। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের আওতার বাইরে থাকবে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিসিক হাইটেক পার্কসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান।
আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ অনুযায়ী পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠান বা জনবলের বেতন-ভাতা এবং তৎসংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয় বাবদ সরকার প্রদত্ত অর্থ পরিষদের তহবিলে জমা দেওয়ার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।