সাকাকে বাঁচাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন আইনজীবী

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে আইনি লড়াই করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
ওই মামলায় সাত আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারী ফারুক আহমেদ, নয়ন আলী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যবস্থাপক মাহবুবুল আহসানও কারাগারে রয়েছেন। নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে তাঁদের কারো জামিন মঞ্জুর হয়নি। তবে অপর দুই আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে থাকায় তাঁদের কারাগারে যেতে হয়নি। এ ছাড়া অপর আসামি মেহেদী হাসান শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলার আসামিদের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সর্বনিম্ন সাত থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একজন আইনজীবীর কাজ হলো ন্যায়বিচারের জন্য আসামি ও আদালতকে সহযোগিতা করা। কিন্তু কেউ যদি আইনজীবী হয়ে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়, তা খুবই দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে জজকোর্টের আইনজীবী এস এম খায়রুল ইসলাম লিটন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় ব্যারিস্টার ফখরুলসহ সাত আসামির অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের শুনানি অপেক্ষমাণ রয়েছে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায় ঘোষণার আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তাঁরা রায়ের খসড়া কপি সংবাদকর্মীদের দেখান। পরে এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন নিবন্ধক এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় প্রথমে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারীসহ চারজনকে আসামি করা হলেও পরে অভিযোগপত্রে আরো তিনজনের নাম আন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ওই মামলায় ট্রাইব্যুনালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলীকে একই বছরের ৩ অক্টোবর এবং সাঁটলিপিকার ফারুক আহমেদকে ৪ অক্টোবর আজিমপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর নয়ন আলী এবং ১৩ অক্টোবর ফারুক আহমেদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও ওই ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী ফারুক আহমেদ জড়িত বলে উল্লেখ করেন।
ওই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজ চেম্বার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ওই বছরের ২৪ নভেম্বর তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন নিম্ন আদালত। পরে তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রিমান্ড বাতিল করেন।
এর পর থেকে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, নয়ন আলী এবং ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন মেহেদী হাসান। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ দাখিল করেছেন। আদালত তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রেখেছেন।