ঈদে নতুন পোশাক জুটবে ওদের?

রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গড়া ‘জুম বাংলাদেশ স্কুল’-এর শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের পোশাক ও সেমাই-চিনি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুলে পড়তে আসা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে ঈদের হাসি ফোটাতে প্রয়োজন অনেক টাকার। তাই ঈদে এসব পথশিশুকে নতুন পোশাক কিনে দিতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন স্কুলটির অন্যতম সমন্বয়ক এস টি শাহীন।
শুরুর কথা
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি বস্তিতে ২০১৬ সালের ১১ জুন ১৩ জন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য গড়া হয় ‘জুম বাংলাদেশ স্কুল’। এখন স্কুলটির গুলিস্তান ও পলাশীসহ তিনটি শাখা রয়েছে। সেখানে পড়ছে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী। স্কুলে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করা হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামের সংগঠন। সেই সংগঠনের সদস্যরাই পরে গড়ে তোলে স্কুল। সেখানে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী, মাদকাসক্ত, বস্তি ও ছিন্নমূল শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হয়।
স্কুলটিতে পাঠদান ও সহায়তা দেন সাদ্দাম হোসেন সৌম্য, রূপকথা, তৌফিক, রাজিব, মাসুদ রানা, মামুন, সাকের, সিমা, রিয়াদসহ কয়েকজন।
সংগঠনের কার্যক্রম
সংগঠনটির কয়েকজন সদস্য জানান, তাঁদের স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা পয়সায় পড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবসে শিশুদের নিয়ে আনন্দ করেন তাঁরা। পয়লা বৈশাখ, শীতের পিঠা খাওয়া, রমাজনে ইফতার করানোসহ শিশুদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে যান সংগঠকরা।
সংগঠনটির সদস্যরা জানান, তাঁদের নিজেদের খরচের টাকা বাঁচিয়ে অথবা বিনা পয়সায় পাঠদান করে স্কুলের শিশুদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই শিশুদের সব রকম দাবি পূরণ করা সম্ভব হয় না। সামাজের বিত্তবানদের অনেকেই সংগঠনটিতে এখন আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন।
সংগঠকরা জানান, জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো অফিস নেই। তবে সম্প্রতি একটি ভাড়া করা অফিসে সাংগঠনিক কিছু কাজকর্ম চলছে। সেখানে শিশুশিদের পাঠদান করানো হচ্ছে কক্ষের কোনায় মাটিতে পাটি বিছিয়ে।
জুম বাংলাদেশ স্কুলের অন্যতম সমন্বয়ক এসটি শাহীন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা থেকেই মূলত ছিন্নমূল এসব শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বস্তির বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে শিশুদের পরিবারের লোকজনদের বুঝিয়ে তাঁদের শিশুদের পাঠদান কানো হচ্ছে। পাঠদান শেষে নিজ অর্থ দিয়ে প্রতিটি শিশুদের নাস্তা বা চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি খাবার ব্যবস্থা করা হয়। যাতে এই খাওয়া বা চকলেটের জন্যে হলেও খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করতে আসে শিশুরা।’
রজমান ও ঈদে সহায়তা
চলতি রমজানে সংগঠনটি স্কুলের শিশুদের জন্য প্রতিদিনই ইফতারির ব্যবস্থা করছে। ইফতারে তেমন দামি খাবার রাখতে পারেন না সংগঠনের সদস্যরা। শুকনো মুড়ি, ছোলা, বেগুনিসহ নানা কিছু রাখা হয়। এসব খাবার পেয়েই খুশি থাকে স্কুলটির সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা।
আসন্ন ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সবাইকে জামা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটির সদস্যরা। সেই সঙ্গে শিশুদের পরিবারের জন্য সামান্য সেমাই-চিনি দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন তাঁরা। তবে এর জন্য বেশ টাকার প্রয়োজন। সেজন্য অন্যদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জুম বাংলাদেশ স্কুলের অন্যতম সমন্বয়ক এস টি শাহীন বলেন, বিত্তবানরা সহায়তার হাত বাড়ালে সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব শিশুর ঈদ হয়ে উঠবে আনন্দময়। শিশুরা পাবে নতুন পোশাক, মুখে উঠবে সেমাই। হাসবে তাদের পুরো পরিবার।
শিশু ও অভিভাবকদের কথা
স্কুলে পড়তে আসা অনিমা নামের এক শিশু বলেয়, ‘পড়তে আসলে স্যাররা আমাদের প্রতিদিন নানা রকম খাবার দেন। আমাদের গেঞ্জি দেন ও খেলার জন্য অনেক কিছু দেন। আবার মাঝে মাঝে পার্কেও বেড়াতে নিয়ে যান।’
ওই শিশুর মা খোদেজা বেগম জানান, তাঁরা পাশেই একটি বস্তিতে থাকেন। মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে রাজি হয়নি। এখন সে জুম বাংলা স্কুলে এসে পড়ায় বেশ মনোযোগ দিয়েছে।
সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা
জুম বাংলা স্কুলের সহায়তা পাঠাতে চাইলে স্কুলের প্রধান সমন্বয়ক এস টি শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তাঁর মুঠোফোন নম্বর ০১৭৩৯৮০১৪১৯। এ ছাড়া সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় চিটাগং রেস্তোরাঁর পাশে জুম বাংলাদেশ স্কুল শাখা, গুলিস্তান ও পলাশী মোড় শাখায়।